এখনো চলছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপজ্জনক গুজবের প্রচার

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত প্রেসিডেন্ট বললে অত্যুক্তি হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বিভিন্ন ইস্যুতে ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য তিনি আলোচনায় ছিলেন। বিভিন্ন সময় তার বিতর্কিত পদক্ষেপের ও নীতির সমালোচনা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটলে তার উসকানিতে সমর্থকরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর মাধ্যমে মার্কিন গণতন্ত্রের ওপর বড় আঘাতটি করে গেছেন ট্রাম্প। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখনো ট্রাম্প অধ্যায় শেষ হয়নি। এখনো রিপাবলিকান পার্টিতে তার বড় প্রভাব রয়েছে। ২০২৪ সালে আবারও তার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। নিজেও সেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন। আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে মার্কিন কংগ্রেস যাতে রিপাবলিকানদের দখলে আসে সেজন্য সবরকম চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। বিভিন্ন রাজ্যে নিজের পছন্দের প্রার্থীদের সমর্থন দিচ্ছেন। সরিয়ে দিচ্ছেন তার সমালোচকদের।

মার্কিন ক্যাপিটলে দাঙ্গায় উসকানির অভিযোগে ট্রাম্পকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম। গত জানুয়ারিতেই তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল ফেসবুক। সংস্থাটির ওভারসাইট বোর্ড সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখলেও ‘চিরতরে নিষিদ্ধের’ শাস্তির সমালোচনা করে। সম্প্রতি তারা নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ২০২৩ সাল পর্যন্ত করেছে। ট্রাম্প এখনো টুইটার, ইউটিউব, স্ন্যাপচ্যাট, টুইচ এবং আরো কয়েকটি সামাজিকমাধ্যমে নিষিদ্ধ রয়েছেন। সামাজিকমাধ্যমে নিষিদ্ধ থাকার কারণে নিজস্ব সামাজিকমাধ্যম তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এই সপ্তাহের শুরুতে জানানো হয়েছে, সেই প্রকল্প স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প থেমে থাকেননি। প্রায়ই বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করে এবং বিভিন্ন ইস্যুতে বিবৃতি দিচ্ছেন। ফেসবুকের সিদ্ধান্তের পর এক বিবৃতিতে বলেছেন, এভাবে সেন্সর করে আর চুপ করিয়ে দেওয়ার কর্মকাণ্ড করে তাদের পার পেতে দেওয়া ঠিক হবে না। শেষ পর্যন্ত আমরাই জিতব। আমাদের দেশ আর কোনো নিপীড়ন সহ্য করবে না। দ্বিতীয় আরেকটি বিবৃতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতাকে আক্রমণ করে বলেন, এরপর আবার যখন আমি হোয়াইট হাউজে থাকব, মার্ক জুকারবার্গ এবং তার স্ত্রীর অনুরোধে আর কোনো ডিনার হবে না।

ট্রাম্প উত্তাপ ছড়াচ্ছেন রিপাবলিকান পার্টির অনুষ্ঠানগুলোতেও। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে তিনি নর্থ ক্যারোলিনায় রিপাবলিকান পার্টির এক নৈশভোজে যোগ দেন। সেখানে তিনি আবারও গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ উত্থাপন করেন। তার দাবি, যেভাবে নির্বাচনে তাকে হারানো হয়েছে তা ‘শতাব্দীর সবচেয়ে বড় অপরাধ’। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে তিনি তৃতীয় বিশ্বের নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করেন।

সিএনএনের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ঐ অনুষ্ঠানে আবারও মার্কিন নির্বাচনি ব্যবস্থাকে খাটো করার চেষ্টা করেছেন। জাতীয় পর্যায়ে নিজেকে কিংমেকার হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আসলে ট্রাম্পের এসব বক্তব্য তার অনুগতদের ভালোভাবেই জানা আছে। ২০২০ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে তিনি এসব বক্তব্যই দিয়েছেন। এদিনের অনুষ্ঠানে তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতির সমালোচনা করেছেন। তার দাবি বাইডেন মার্কিন অর্থনীতি ধ্বংস করে দিচ্ছেন। আবারও তিনি দাবি করেছেন, তার কারণেই অতি দ্রুত কোভিডের ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে তিনি গত নভেম্বরের নির্বাচন নিয়ে তার মিথ্যা গুজব অব্যাহত রেখেছেন। তার দাবি, তিনি মার্কিন গণতন্ত্রের ক্ষতি করছেন না বরং রক্ষার চেষ্টা করছেন।

সিএনএন বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে মনে হয়েছে রিপাবলিকান পার্টির বেশির ভাগ নেতা ও সমর্থকদের জন্য তার এই গুজব পবিত্র বাণীতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি কিউঅ্যানন অনুসারী ও ট্রাম্পের সমর্থক ফোরাম বলেছে, ট্রাম্পকে আবারও ক্ষমতায় আনতে মিয়ানমারের মতো সেনা অভ্যুত্থান কেন যুক্তরাষ্ট্রে হচ্ছে না।

সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, ভোট জালিয়াতির কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই বেশির ভাগ রিপাবলিকান বিশ্বাস করে, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চুরি করা হয়েছে। ট্রাম্পের এই গুজবের প্রচার যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য আরো বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। যার নজির যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব গত ৬ জানুয়ারি দেখেছে।

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin