• Homepage
  • >
  • সারাদেশ
  • >
  • সময় বাড়ছে দেড় বছর, ব্যয় বাড়ছে ১২০০ কোটি টাকা

সময় বাড়ছে দেড় বছর, ব্যয় বাড়ছে ১২০০ কোটি টাকা

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মহানগরীর নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ প্রকল্পের সময় বেড়েছে আরো দেড় বছর। একই সঙ্গে এর ব্যয়ভারও বেড়ে যাচ্ছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম মহানগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের জুন মাসে। এটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল ২০২২ সালের জুন মাসে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার উক্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ ব্যয় এবং সময় বৃদ্ধির জন্য নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)-এর তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন উক্ত প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, তিন দিন আগে নতুন ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে শতকরা ৩৬ ভাগ ব্যয় বৃদ্ধি ধরা হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ সম্পন্নের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয় ম্যাক্স নামক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চীনের অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে প্রকল্পটির কাজ করছে। সিডিএ’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সময় প্রকল্পটি ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পায়। যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।

গত প্রায় তিন বছর ধরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলাকালে টাইগারপাস থেকে বিমানবন্দর সড়কে চলাচলে জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। উক্ত সড়ক পাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লোকজন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য সড়কের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়তে হয়। বর্ষার সময় তা চরম আকার ধারণ করে। সড়ক মাঝে বিরাট অংশ জুড়ে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলায় দু’পাশের সংকীর্ণ রাস্তায় যান চলাচলের ধীরগতি কর্মস্থলে পৌঁছাতে বিলম্বের সম্মুখীন হতে হয়। আবার ধুলাবালি ও খানাখন্দকে পড়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গত কয়েক মাস ধরে হঠাৎ করে নগরীর চৌমুহনী থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত কাজ এক প্রকার বন্ধ রয়েছে। অথচ শীতকালে কাজের উপযুক্ত সময় হলেও সড়ক মাঝে আংশিক খোঁড়াখুঁড়ির পর কাজ বন্ধ রাখা হয়। 

এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক জানায়, কিছু টেকনিক্যাল কারণে এই অংশের কাজ বন্ধ রেখে অন্য অংশে কাজ করা হচ্ছে। এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে জনগণের দুর্ভোগও প্রলম্বিত হবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। জানা যায়, নতুন ডিপিপিতে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান (ইউটিলিটি) সমূহের জন্য ব্যয় শতকরা ৭০ ভাগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে প্রকল্পের ডিজাইন-ড্রয়িংসহ অন্যান্য খাতে শতকরা ৩০ ভাগ ব্যয় বৃদ্ধি ধরা হয়েছে। নতুন ডিপিপি অনুযায়ী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বারেক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত নতুন করে ৩ কিলোমিটার সড়ক অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে।

জানা যায়, প্রকল্পে আগে ভূমি অধিগ্রহণসহ ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৭ কোটি টাকা। নতুন করে পাঠানো প্রস্তাবে তা বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। আগে ১১০ কাঠা জমির ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সম্ভাব্য প্রস্তাব ছিল। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০০ কাঠায়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের স্থাপনাসমূহ পরিবর্তনের জন্য খরচ ধরা হয়েছিল ১৮ কোটি টাকা। বর্তমান প্রস্তাবে পিডিবির জন্য ব্যয় দেখানো হয়েছে ২২০ কোটি টাকা। পাওয়ার গ্রিড অব বাংলাদেশে একাধিক স্থাপনা বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে বর্তমানে ১৬ কোটি টাকা। সড়কের ডিভাইডারের ওপর সিটি করপোরেশনের লাইট পোস্ট সরানোর বাবদ সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছে ৫ কোটি টাকা। উক্ত এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে টোল আদায় করার জন্য আধুনিক টোল প্লাজা নির্মাণ ব্যয় বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। নতুন প্রস্তাবে এক্সপ্রেসওয়ের পাশে শব্দ নিরোধ প্রতিবন্ধকতার জন্য নতুন প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম মহানগরীর ১৬ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যপথে ১৬টি স্থানে উঠানামা করার জন্য র‌্যাম লুপ থাকবে বলে জানা যায়। যা আগের ডিজাইন-ড্রয়িংয়ের ক্ষেত্রে পুরোপুরি নির্ধারিত ছিল না।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ইতিপূর্বে প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হলেও তার অনেক ক্ষেত্রে খরচের হিসাবে অস্পষ্টতা ছিল। অনেক খরচ লাম-ছাম হিসেবে ধরা হয়েছিল।

বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের (চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার) প্রাক্তন সভাপতি জেরিনা হোসেন বলেন, তড়িঘড়ি করে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে প্রকল্প প্রস্তাব পাশ করার খেসারত জনগণকে দিতে হচ্ছে। আর্থিক জবাবদিহিতা না থাকায় জনগণের অর্থের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। জনদুর্ভোগ আরো বেড়ে যাবে নতুন প্রকল্প প্রস্তাবে। তিনি বলেন, প্রকল্প গ্রহণের আগে জনসমক্ষে খরচসহ প্রকল্প প্রস্তাবের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা ও মতামত ব্যতিরেকে প্রকল্প গ্রহণ করায় দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin