• Homepage
  • >
  • বাংলাদেশ
  • >
  • কাশেমকাণ্ডে বিব্রত যুক্তরাষ্ট্র আ’লীগ: রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, নাম ফাঁসের ভয়ে অনেকে আত্মগোপনে

কাশেমকাণ্ডে বিব্রত যুক্তরাষ্ট্র আ’লীগ: রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, নাম ফাঁসের ভয়ে অনেকে আত্মগোপনে

প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম।

জার্নাল রিপোর্ট : অর্থ পাচার মামলায় প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি আবুল কাশেম গ্রেপ্তারের ঘটনায় প্রবাসে সর্বত্র আলোচনা চলছে। এ ঘটনায় বিব্রত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সাংগঠনিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছেন নেতারা। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সাধারণ প্রবাসীরাও।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড, সিদ্দিকুর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম অর্থ পাচারের অভিযোগে ঢাকার পুলিশ গ্রেফতার করেছেন বলে দেশে ও প্রবাসে খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তির অবনতি ঘটিয়েছে। কেন্দ্রের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী যথাযথ গুরুত্ব সহকারে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি জানান, আবুল কাশেমের এহেন কথিত কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রবাসী জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগর অনেক নেতা রাতারাতি কোটিপতি হয়েছেন। আবুল কাশেম গ্রেপ্তার হওয়ায় তাদের আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে অর্থ পাচারের মামলায় আবুল কাশেমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি। ২৬ জুন সোমবার ঢাকার মহানগর হাকিম আরাফাতুল রাকিব রিমান্ডের এই আদেশ দেন বলে আদালত পুলিশের কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি কাশেমকে ২২ জুন বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করে সিআইডি। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের চেয়ারম্যানসহ চারজনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে যে মামলা চলছে, তাতে কাশেমও আসামি। তাদের দেশ ছাড়ার ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা ছিল। এরমধ্যেই গত ২১ জুন বুধবার রাতে বিদেশ যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দরে আটকা পড়েন কাশেম। পরে তাকে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডির হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাকে সেই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আবেদনসহ সে দিনই আদালতে পাঠান হয়েছিল। ২৬ জুন সোমবার সেই আবেদনের শুনানি শেষে দুদিনের রিমান্ডের আদেশ হয়। রিমান্ডে নেওয়ায় তার বেশকয়েকজন সহযোগী গা ঢাকা দিয়েছেন, যাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমপক্ষে চারজন নেতা রয়েছেন। রিমান্ডে স্বীকারোক্তি দিলে ওই নেতারা ফেঁসে যেতে পারেন এই আশঙ্কায় আপাতত তারা ‘নিরাপদ দূরত্ব’ বজায় রাখছেন বলে জানা গেছে।
আবুল কাশেমের জামিনের জন্য তার আত্মীয়স্বজন ইতিমধ্যে আইনজীবী নিয়োগ করেছেন। ঈদের দীর্ঘ ছুটি হওয়ায় ডিটেনশন শেষেও তার জামিন পাবার সম্ভাবনা পিছিয়ে গেল।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেফতারের খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে নিউইয়র্কে। প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি আবুল কাশেম ১০০ কোটি টাকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালানোর চেষ্টা করছিলেন বলে জানা যায়। গত ২১ জুন বুধবার মধ্যরাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এ খবর দ্রুত ছড়ালে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিসহ আওয়ামী লীগ পরিবারে শুরু হয় তোলপাড়।
আওয়ামীলীগ নেতা আবুল কাশেম দীর্ঘদিন ধরে নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে বসবাস করছেন। অতি সাম্প্রতি প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের অংশীদারিত্ব দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে তিনি হাজার হাজার ডলার নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু কাউকেই উক্ত ব্যাংকের অংশীদারিত্ব দেননি। এমন সময় তার গ্রেফতারের খবরে হতাশ হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগিরা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালকের পদ পাওয়ার জন্য এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে হাজারো গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া একশ কোটি টাকা মঞ্জুর আলম ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে দিয়েছিলেন।
অর্থ পাচারের জড়িত অর্ধ ডজন নেতা! : অর্থ পাচার সংক্রান্ত মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেমকে গ্রেফতারের খবরে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের মাঝে শুরু হয়েছে তোলপাড়। তিনি তার প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে অর্থ আদায় ও পাচার করে আসছিলেন বলে জানা যায়। গত ২১ জুন বুধবার মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রে আসার উদ্দেশ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এ খবর দ্রুত ছড়ালে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিসহ আওয়ামী লীগ পরিবারে শুরু হয় তোলপাড়। তার অর্থ পাচারের সাথে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের আরও অর্ধ ডজন নেতা জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে। তার গ্রেফতারের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়েছে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী। ফলে কেউই এখন দেশে যেতে চাচ্ছেন না। ঢাকার অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)’র তদন্ত শেষ হলেই রাঘব বোয়ালদের নাম বেরিয়ে আসবে বলে ধারণা করছেন প্রবাসীরা।
নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের বাসিন্দা নির্মাণব্যবসায়ী আবুল কাশেম ২০০৮ সালে জাসদ থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাদের ম্যানেজ করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তিনি দলের ১০ নম্বর সহ-সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। যুক্তরাষ্ট্রে তার রয়েছে নির্মাণব্যবসা। পিপলস ব্যাংক গঠনের জন্য আবুল কাশেম যেসব সম্পদের হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছিলেন তার একটিরও সত্যতা খুঁজে পায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘পিপলস ব্যাংক’ নামে নতুন একটি ব্যাংকের মালিক হওয়ার আশ্বাস পেয়ে ২০১৭ সালে দেশে ফিরে যান আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সহ-সভাপতি আবুল কাশেম। অনুমোদন পাওয়ার আগেই রাজধানীর বনানী ডিওএইচএসে ‘প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক লিমিটেড’ নামে সাইনবোর্ড ব্যবহার করে কার্যালয়ও খোলেন তিনি। এরপর ব্যাংকের পরিচালক বানানোর আশ্বাস দিয়ে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মূলধন ও বাড়তি খরচ সংগ্রহ শুরু করেন। এভাবে কাটে প্রায় দুই বছর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পিপলস ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ও সিটিজেন ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন দেয়। নীতিগত অনুমোদন পাওয়া পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন আবুল কাশেম। ওই অনুমোদনের পর বেঙ্গল কমার্শিয়াল ও সিটিজেন ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করলেও পিপলস ব্যাংক আর আলোর মুখ দেখেনি।
শর্ত পালন করতে না পারায় ব্যাংকটির প্রাথমিক অনুমোদনও বাতিল করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু অনুমোদনের আগে ব্যাংকের নামে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ আর ফেরত দেননি আবুল কাশেম। ব্যাংকের পরিচালক বানানোর কথা বলে এসব অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেই টাকায় আবুল কাশেম নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে বেশ কয়েকটি বাড়ি, গুলশানে ফ্ল্যাট এবং দামি গাড়ি কিনে সদর্পে ঘুরে বেরিয়েছেন ঢাকা শহর আর নিউ ইয়র্কে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকটি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যাংকটিকে লেটার অব ইনটেন্ট বা আগ্রহপত্রও দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। তবে তিন বছরে কয়েক দফায় সময় নিয়েও সেই আগ্রহপত্রের শর্ত পূরণ করতে পারেনি ব্যাংকটি।
এদিকে ব্যাংক গঠনের জন্য আবুল কাশেম যে অর্থ সংগ্রহ করেন, তার সব টাকা তিনি ব্যাংক হিসাবে জমা করেননি। আবার যেসব অর্থ জমা করেন, তা ব্যাংকের নামে না করে নিজ হিসাবে জমা করেন। আবার যাঁদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয়, তাঁদের সবাইকে পরিচালক বা উদ্যোক্তা পদও দেওয়া হয়নি।
শুরুতে যাঁদের পরিচালক করা হয়েছিল, পরে তাঁদের কয়েকজনকে বাদ দিয়ে ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান, তার মা শিরিন আক্তারসহ নতুন কয়েকজনকে পরিচালক হিসেবে যুক্ত করার উদ্যোগ নেয় ব্যাংকটি। পাশাপাশি শর্ত পরিপালনের জন্য আরও সময় চায়। সাকিব আল হাসান ও আবুল কাশেম ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবীরের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানান। তবে ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি নতুন করে সময় বাড়ানোর আবেদন নাকচ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটিকে দেওয়া আগ্রহপত্রও বাতিল করা হয়। ফলে ভেস্তে যায় ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, সাকিব আল হাসান ৪০ কোটি টাকা দিয়ে ব্যাংকটির দুটি পরিচালক পদ নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, পিপলস ব্যাংক বলতে দেশে কিছু নেই। অনেক আগেই এর উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। যাঁরা পরিচালক হওয়ার জন্য টাকা জমা দিয়েছেন, তাঁরা নিজ দায়িত্বে দিয়েছেন। তাঁদের টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু করার নেই।
পিপলস ব্যাংক গঠনের উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যবসায়ী ও ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার আশায় কাশেমের সঙ্গে যুক্ত হন অনেকে। এখন ব্যাংকও হয়নি, টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না।
২০২০ সালের ২৬ জুলাই আলেশা মার্ট যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নেয়। আনুষ্ঠানিকভাবে আলেশা মার্টের যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি। প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের পরিচালক হতে এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া ১০০ কোটি টাকা আবুল কাশেমকে দিয়েছিলেন আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদার। ফলে আলেশা মার্টের গ্রাহকদেরও বড় অঙ্কের টাকা আটকে গেছে আবুল কাশেমের কাছে।
এ ঘটনায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদার, তাঁর স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরী, পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে সিআইডি। সম্প্রতি রাজধানীর বনানী থানায় এ মামলা করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (এসপি) আল মামুন। এরপরই আবুল কাশেমকে আটক করা হয়।
২০১৭ সালে দেশে যাওয়ার কিছুদিন পর প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের পরিচালক হতে আগ্রহী এক ব্যক্তি আবুল কাশেমকে গুলশানে একটি বাসা ভাড়া করে দেন। ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ভেস্তে গেলেও তিনি গুলশান-২ এলাকার ১০৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়ির ওই ফ্ল্যাট কিনে নেন। আটকের পর ওই বাসার নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায় তার ঢাকা মেট্রো-গ-৪৫-৭৮২১ নম্বরের গাড়িটি।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক উত্তম কুমার মণ্ডল অর্থ পাচার প্রতিরোধে নিয়োজিত সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে ১ জুন একটি চিঠি দেন। সেখানে বলা হয়, আবুল কাশেমের হাতে ব্যাংক চেয়ারম্যান হওয়ার মতো সম্পদ না থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে বসে আমেরিকায় ৪০ কোটি টাকার সম্পদ দেখান। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের মালিক মঞ্জুর আলম শিকদার যুক্তরাষ্ট্রে আবুল কাশেমের কাছে ১৫০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী জানান, মানুষ এখন বৈধ-অবৈধ বিভিন্ন উপায়ে টাকা উপার্জন করছেন। ব্যাংকের মালিক হওয়া প্রতিপত্তির বিষয়, এ জন্য অনেকেই তাকে টাকা দিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিক অনুমোদন দিয়ে তাকে স্বীকৃতিও দিয়েছে।
আসলেই দেশে ব্যাংকের প্রয়োজন আছে কি না, তা বিবেচনা করা হয়নি। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এই ব্যাংকের প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার জন্য একটা ভালো মানদণ্ড ঠিক করা উচিত। শুধু আর্থিক নয়, সামাজিক মর্যাদাও বিবেচনা করা উচিত। তাহলে প্রতারণার কারণে জেলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রটি আরও জানায়, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর ব্যবসা সীমিত করে ফেলেন আবুল কাশেম। ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র সফরে এলে তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন তিনি। তখন ওই ব্যক্তি আবুল কাশেমকে ব্যাংকের সনদ দেওয়ার আশ্বাস দেন।
এরপরই তিনি দেশে গিয়ে পিপলস ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নেন। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংক গঠনে ৫০০ কোটি টাকা মূলধন লাগে। বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া ব্যাংকটির আবেদনপত্রে পরিচালক হিসেবে ছিলেন দিশারি ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ফারজানা হোসাইন, তমা কনস্ট্রাকশনের পরিচালক মুকিতুর রহমান, গাড়ি বিক্রয়কেন্দ্র কার সিলেকশনের মালিক আসলাম সেরনিয়াবাত, সুমি অ্যাপারেলসের প্রতিনিধি রেজাউল হোসেন, মদিনা ফার্মাসিউটিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহা. জাকির হোসেন পাটওয়ারী, খান ব্রাদার্স গ্রুপের এমডি তোফায়েল কবির খান, গুলশানের খন্দকার টাওয়ারের মালিক খন্দকার বদরুল আহসান, দিগন্ত সোয়েটারের প্রতিনিধি তানজিমা শাহতাজ, শোয়ান ইন্টারন্যাশনালের এমডি আমজাদ খান ও সাইনেস্ট অ্যাপারেলের প্রতিনিধি সামিহা আজিম। এ ছাড়া মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আলিম খানও ছিলেন তার সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পরিচালক হতে আগাম টাকা দিয়েছিলেন। তাঁদের অনেকে এখন সেই টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, পিপলস ব্যাংকের পরিচালক বানানো ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের কথা বলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট থেকেও ১০০ কোটি টাকা নিয়েছিলেন আবুল কাশেম। এ ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পাশাপাশি তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গত বুধবার মধ্যরাতে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে আবুল কাশেম কারাগারে রয়েছেন।
আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার সকালে সিআইডির কাছে আবুল কাশেমকে বুঝিয়ে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। এরপর রিমান্ড চেয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হলে শুনানির জন্য ২৫ জুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সেই সঙ্গে আবুল কাশেমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

আবুল কাশেমের জন্ম ১৯৫২ সালে। তার বাবা চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের রহমতপুরের আবু বকর সিদ্দিক। সন্দ্বীপের এবি হাইস্কুল থেকে ১৯৭৩ সালে মাধ্যমিক, ওমর গনি কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে উচ্চমাধ্যমিক ও চট্টগ্রামের নাজিরহাট ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৯৭৮ সালে তিনি বিএ সম্পন্ন করছেন বলে ব্যাংকে জমাকৃত নথিতে উল্লেখ করেন আবুল কাশেম। আশির দশকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর থেকে ব্রুকলিনে বসবাস শুরু করেন।

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin