• Homepage
  • >
  • সব খবর
  • >
  • টেক্সাসে স্কুলে বন্দুক হামলায় ১৯ শিক্ষার্থীসহ নিহত ২১

টেক্সাসে স্কুলে বন্দুক হামলায় ১৯ শিক্ষার্থীসহ নিহত ২১

টেক্সাসে বন্দুক হামলার পর রব এলিমেন্টারি স্কুলের সামনে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত।

জার্নাল রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের একটি এলিমেন্টারি (প্রাথমিক) স্কুলে বন্দুকধারীর গুলিতে ১৯ শিক্ষার্থী ও একজন শিক্ষকসহ মোট ২১ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন বন্দুক হামলাকারীও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর গুলিতে মারা গেছে। স্থানীয় সময় ২৪ মে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে দক্ষিণ টেক্সাসের উভালদে শহরের রব এলিমেন্টারি স্কুলে এ হত্যাযজ্ঞ ঘটে।

টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, রব এলিমেন্টারি স্কুলটি আমেরিকার সপ্তম বৃহত্তম শহর সান আন্তোনিও থেকে প্রায় ৮৩ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত। নিহত শিশুরা স্কুলের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের বয়স ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে।

গভর্নর আরো জানান, বন্দুকধারী সালভাদর রামোস (১৮) উভালদে’তে বসবাস করতো। সে গাড়ি থেকে নেমে বন্দুক হাতে বিদ্যালয়টিতে প্রবেশ করে। এসময় তার হাতে ছিল একটি হ্যান্ডগান এবং একটি রাইফেল। স্কুলে ঢুকেই এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে ১৪ জন ছাত্র এবং একজন শিক্ষক ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অন্যরা হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান। বন্দুকধারীর গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও আহত হয়েছেন। তবে তারা আশঙ্কামুক্ত। পরে কর্তব্যরত একজন বর্ডার পেট্রল এজেন্টের গুলিতে হামলাকারীও নিহত হয়।

পুলিশ জানায়, বন্দুকধারীর গুলিতে আরও অনেকে আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ৬৬ বছর বয়সী নারী এবং একজন ১০ বছর বয়সী শিশু আন্তোনিওর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ওই স্কুলের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০০। বন্দুক হামলাকারী সালভাদর রামোসকে নিবৃত্ত করতে চেষ্টা চালিয়েছিল তার দাদী। কিন্তু সে তার দাদীকেও গুলি করেছে। গুলিবিদ্ধ ৬৬ বছর বয়সী নারী সম্ভবত হামলাকারীর দাদী পুলিশ সনাক্ত করেছে। তার অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক।

হামলার পর শিক্ষার্থীদের স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জরুরি পরিষেবার মাধ্যমে আহতদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। ওই স্কুলের বছরের বাকি সব ক্লাস ও কার্যক্রম এখন বাতিল করা হয়েছে।

বন্দুক হামলার পর তদন্তে নেমেছে টেক্সাস রাজ্যের পুলিশ। ইতোমধ্যে জনসাধারণকে ঘটনাস্থল থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন তারা। উভালদে মেয়র ডন ম্যাকলাফলিন জানিয়েছেন, এফবিআই এই তদন্তে সহায়তা করছে।

উভালদে নিহতদের সম্মানে হোয়াইট হাউজ এবং অন্যান্য যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ভবনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা অর্ধনমিতভাবে ওড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

এদিকে ২৪ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউজ থেকে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া আবেগঘন ভাষণে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘আমি যখন প্রেসিডেন্ট হলাম, তখন আশা করেছিলাম যে এমন ঘটনা আর ঘটবে না।’ তিনি বলেন, ‘নিহতের বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানকে আর কখনও দেখতে পাবে না। তারা কখনই তাদের বিছানায় লাফিয়ে তাদের সাথে আলিঙ্গন করবে না। বাবা-মা যারা কখনও এক হবে না। একটি শিশুকে হারানো আপনার আত্মার একটি টুকরো ছিঁড়ে ফেলার মতো।’

বন্দুক নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়ে বাইডেন বলেন, ‘আইন প্রণেতাদের এই ব্যথাকে কর্মে পরিণত করতে হবে। কানেকটিকাটের নিউটাউনের স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে ২০১২ সালের গণহত্যার (২৬ শিক্ষার্থী নিহত) পর থেকে আমরা বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। আমি তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম’, উল্লেখ করেন বাইডেন।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘আমি অসুস্থ এবং ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমাদের এ বিষয়ে কাজ করতে হবে। কেন আমরা এমনটা বার বার ঘটতে দিচ্ছি?’ তিনি কংগ্রেসকে বন্দুক অপরাধ কমাতে বাজেট বরাদ্দ এবং অন্যান্য আইন পাস করার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, মাত্র ১০ দিন আগে নিউইয়র্কের বাফেলোর টপস সুপারমার্কেটে গুলি চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করে এক শ্বেতাঙ্গ তরুণ। সেই রক্তের দাগ না শুকাতেই টেক্সাসে ঘটলো আরো বড়, নির্মম ও বেদনাদায়ক হত্যাযঞ্জ।

এর আগে ২০১৮ সালের মে মাসে টেক্সাসের একটি স্কুলে গুলি করে ১০জনকে হত্যা করা হয়। এরপর থেকে এই ধরনের ১১৯টি ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরেই ২৭টি স্কুলে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আগের বছর অর্থাৎ, ২০২১ সালে ৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ২০২০ সালে ১০টি এবং ২০১৯ ও ২০১৮ উভয় সালেই ২৪টি গুলিবষর্ণের রেকর্ড রয়েছে।

গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) দ্বারা প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে গুলিতে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মৃত্যু গাড়ি দুর্ঘটনাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

সোমবার এফবিআই’র এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০ সালে করোনভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে সক্রিয় শুটার তাণ্ডব আক্রমণ দ্বিগুণ হয়েছে।

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin