ঢাকায় বিক্ষোভ-সংঘর্ষ, নোয়াখালীতে হামলা

ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে গতকাল শুক্রবার নোয়াখালীর চৌমুহনীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের দোকানপাট, মন্দির ও বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে শতাধিক আহত ও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদিকে জুমার নামাজের পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে মুসল্লিদের একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হলে বাধা দেয় পুলিশ। তখন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও সাউন্ডগ্রেনেড নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। এতে ৫ জন আহত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ইত্তেফাকের বিশেষ প্রতিনিধি জানান, জুমার নামাজের আগেই দুপুর ১টা ২৫ মিনিটের দিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর পাশের একটি গেট বন্ধ করে দেয় পুলিশ। এতে নামাজ পড়তে আসা একদল মুসল্লি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। নামাজ শেষে ওই গেটের তালা ভেঙে বেরিয়ে আসেন তারা। বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে রাস্তায় নেমে মিছিল বের করেন। মিছিলটি মালিবাগের দিকে এগোতে থাকলে পুলিশ নাইটেঙ্গেল মোড়ে ব্যারিকেড দেয়। এসময় উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

সাধারণ মুসল্লিদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল হলেও এতে হেফাজতে ইসলামসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অংশ নিতে দেখা গেছে। বিক্ষোভ থেকে কুমিল্লায় কোরআন অবমাননাকারীদের শাস্তির দাবির পাশাপাশি হেফাজতের সাবেক নেতা মাওলানা মামুনুল হকসহ সংগঠনটির নেতাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের কেউ-কেউ গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা ও তাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে প্রায় ১০ মিনিট পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলতে থাকে। এতে পল্টন, কাকরাইল, বিজয় নগর ও ফকিরাপুল এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আবদুল আহাদ বলেন, বিক্ষোভকারীদের কেউ-কেউ পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ছোঁড়ে। তখন পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ধাওয়া দেয় এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এসময় রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. বায়জিদুর রহমানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশ মিছিল থেকে পাঁচ জনকে আটক করেছে। বেলা আড়াইটার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যান চলাচল শুরু হয় বলে জানা গেছে।

নোয়াখালীতে মিছিল থেকে হামলা

সেনবাগ (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুর দুইটার দিকে জুমার নামাজ শেষে চৌমুহনী শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে কয়েক হাজার মুসল্লি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়কের উত্তর পাশের শ্রী কৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভান্ডার, রামকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভান্ডারসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের দোকানের সাইবোর্ড দেখে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এক পর্যায়ে তারা শহরের কলেজ রোডে ঢুকে পড়ে আশেপাশের অনেক দোকানে এবং রাম ঠাকুর আশ্রম, রাধা মাধব জিওর মন্দির, ইস্কন মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া বিভিন্ন বাসাবাড়ি লক্ষ্য করে বৃষ্টির মত ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। মন্দিরের সামনে ও আশেপাশে থাকা লোকজনকে গণহারে পিটিয়ে আহত করে। হামলার ব্যাপকতা দেখে চৌমুহনী ইস্কন মন্দিরে থাকা যতন সাহা (৩২) অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাত্ক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় রাবেয়া প্রাইভেট হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিত্সক মৃত ঘোষণা করেন। সন্ধ্যায় বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামছুন নাহার জানান, বিক্ষিপ্তভাবে চৌমুহনীর বিভিন্ন এলাকায় হামলা-ভাঙচুর চলছে। বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।

চট্টগ্রাম ও সিলেটে আক্রান্ত আরো তিন পূজামণ্ডপ

চট্টগ্রাম অফিস জানায়, শুক্রবার দুপুরের পর আন্দরকিল্লা মোড় থেকে একদল অল্প বয়সী তরুণ মিছিল করে জে এম সেন হলের সামনে পূজার গেট ভাঙ্গচুর করার চেষ্টা চালায়। পুলিশ মিছিলকারীদের ধাওয়া করলে তারা কদম মোবারক এতিমখানার দিকে চলে যায়। এর পরপরই পূজা প্রাঙ্গণে আগত বিক্ষুব্ধ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আন্দরকিল্লা মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাতে থাকেন। সমাবেশে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দও যোগ দেন। সমাবেশ থেকে দুষ্কৃতকারীরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জন বন্ধ রাখা এবং ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগরী পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশিষ কুমার ভট্টাচার্য ইত্তেফাককে জানান, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তারা ধর্মঘট কর্মসূচি থেকে সরে এসে প্রতিমা বিসর্জন করেছেন।

সিলেট অফিস জানায়, জুমার নামাজ শেষে একটি মিছিল থেকে মদিনা মার্কেট কালীবাড়ি হালদারপাড়া এলাকায় দুটি পূজামণ্ডপে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার বেলা দুইটার পর ভাটিবাংলা অগ্রদূত যুবসংঘের ও উদীয়মান ভাটিবাংলা পূজামণ্ডপে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় প্রতিমার কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও দুইজন স্বেচ্ছাসেবক আহত হয়েছেন। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ জানান, শুক্রবার দুপুরে নগরীর ডিআইটি জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে কয়েক হাজার মুসল্লি মিছিল বের করেন। মিছিলটি নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চাষাঢ়া এলাকায় গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ কয়েক জনকে ধাওয়া দিয়ে ধরে দেহ তল্লাশি করে। এসময় মিছিলকারীরা পবিত্র কোরআন অবমাননাকারীদের বিচার দাবি করে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin