তরুণদের ভিন্ন উদ্যোগ প্রাণীদের বাঁচাতে

প্রসেনজিৎ কুমার। ছবি: সংগৃহীত
প্রসেনজিৎ কুমার। ছবি: সংগৃহীত

সেই ভয়াবহ মার্চ। দেশের চারদিকে করোনার প্রকোপ যেন জেঁকে বসতে শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ফলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর ক্যাম্পাস বন্ধ মানেই আবাসিক হলগুলো তো বন্ধ হবেই। সেই সুবাদে ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য থাকে স্ব স্ব গ্রামের আবাসভূমি। এবারেও তার ব্যতিক্রম নয়।

তবে সব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছাড়লেও কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের আশপাশের মেসে দিনাতিপাত করছিল। তাদের ভাবনা— করোনা আর তেমন কি; কয়েকদিন পর ঠিকই আগের মতো হবে। ক্যাম্পাস আবার স্বাভাবিক নিয়মে চলে আসবে। তাই কয়েকদিন মেসে থেকেই দিন পার করে দেই; বাসায় গিয়ে কী হবে।

মেসেই তাদের বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হয়। একদিন প্রসেনজিত্ কুমার নামে এক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসে। আর এসেই চোখে পড়ে ক্যাম্পাসের নানান দৃশ্য। জন-মানবশূন্য ক্যাম্পাস; মানব প্রাণীর দেখা মেলা ভার। দোকান-পাট সব বন্ধ। শুধু অসহায় হয়ে এদিক-ওদিক ঘুরাফেরা করছে কয়েকটি কুকুর-বিড়াল আর নানা রকমের সব পাখি। যেন তারা খাবারের সন্ধানে নাজেহাল। ভিতরে কোথাও কোনো খাবার নেই। তা দেখে সেই শিক্ষার্থীর মনে দয়া হয়। তাই সে ঠিক করে এদের খাবার খাওয়ার দায়িত্ব সে নিজের কাঁধে নিবে। যতদিন না ক্যাম্পাস খুলবে ততদিন পর্যন্তই। যেমন কথা তেমন কাজ।

ক্যাম্পাসেই রান্না-বান্নার কাজ শুরু করে এবং ক্ষুধার্ত প্রাণীগুলোকে খাবার দেয়। তার সঙ্গে ক্যাম্পাসের আরও কিছু শিক্ষার্থী যোগ দেয়। তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহমুদ সাকি ও তুষার। সাকি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এবং তুষার ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের। তার কিছুদিন পর তাদের সঙ্গে সঙ্গ দেয় ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইসতিয়াক ইমু, একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের তামির হোসেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী প্রসেনজিত্। প্রসেনজিত্, ইমু, তামির এখনও ক্যাম্পাসের প্রাণীদের নিয়মিত খাবার খাওয়াচ্ছেন।

তারা অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রাণীদের জন্য বাজার করা সবই করে অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে। পোষ্য প্রাণীদের সংরক্ষণে তারা একটি প্রকল্পও গঠন করেছে— ‘পোষা প্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্প’।

প্রসেনজিত্ জানান, ক্যাম্পাসে প্রায় দুই শ’ কুকুর-বিড়াল রয়েছে। এখনও ক্যাম্পাস খোলেনি বলে হোটেল, ডাইনিং-ক্যান্টিন বন্ধ। তাই প্রাণীগুলো আমাদের খাবারের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আমাদের দেখলেই পিছু নেয়। ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের যে কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা তাদের কাজে সহযোগিতা করতে পারেন বলেও জানান তিনি।

প্রাণীদের জন্য শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। যখন মানুষেরই প্রাণ রক্ষা করা দায় সেখানে তারা নিজের জীবন বাজি রেখে ওইসব অসহায় প্রাণীদের জীবন রক্ষার জন্য কাজ করেছেন এবং তা আজও চালু রেখেছেন। এমন মহত্ কাজ দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন মহল বেশ উত্সাহ প্রকাশ করেছেন এবং সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাওন উদ্দিন। প্রসেনজিত্ জানান, দীর্ঘ পাঁচ মাসই এই শিক্ষক তাদের বাজার করে দিয়েছেন।

পশু-পাখিদের জন্য শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগ অটুট থাকুক, বেঁচে থাকুক প্রাণীদের জন্য মানুষের ভালোবাসা। এমন শিক্ষার্থীরা যুগ যুগ ফিরে আসুক প্রাণের এই সবুজ ক্যাম্পাসে। অসহায় প্রাণীদের বাঁচানোর মাধ্যমে টিকে থাকুক প্রকৃতির ভারসাম্য।

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin