• Homepage
  • >
  • বাংলাদেশ
  • >
  • দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে, আয় কমেছে ৫৫.৯ ভাগ পরিবারের

দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে, আয় কমেছে ৫৫.৯ ভাগ পরিবারের

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারির সময় দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। তুলনামূলক বেশি দারিদ্র্য মানুষের বসবাস রংপুর বিভাগে। করোনার প্রভাবে দেশে দারিদ্র্য মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৈষম্যও বেড়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির হিসাবে করোনার এই সময়ে মাথাপিছু গড় শিক্ষাব্যয় কমলেও সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য খাতে খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

‘দারিদ্র্য ও জীবিকার ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব: সানেমের দেশব্যাপী জরিপের ফলাফল’ শিরোনামের শনিবার একটি ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ওয়েবিনারে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।

ওয়েবিনারে আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

জরিপের ফলাফল উপস্থাপনের সময় ড সেলিম রায়হান বলেন, এই জরিপের মূল উদ্দেশ্য ছিলো কোভিড পূর্ববর্তী সময়ের সঙ্গে কোভিড পরবর্তী সময়ে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও কর্মসংস্থানের স্বরূপ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া। ২০১৮ সালে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সঙ্গে সানেমের করা জরিপের মধ্যে থেকে ৫৫৭৭টি খানার ওপর এই জরিপটি ফোন কলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সারা দেশব্যাপী এই জরিপটি ২০২০ সালের ২ নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত হয়।

জরিপের ফল অনুযায়ী, ২০২০ সালের শেষ দিকে দেশের দারিদ্র্য হার পাওয়া গেছে ৪২ শতাংশ। ২০১৮ সালে জিইডি-সানেমের জরিপে যা ছিলো ২১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ২০১৬ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা জরিপ অনুসারে দারিদ্র্য হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

বিবিএস’র খানা জরিপ অনুসারে ২০১৬ সালে গ্রামাঞ্চলের সার্বিক দারিদ্র্য ছিলো ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৮ সালের জিইডি সানেম জরিপ অনুসারে যা ছিলো ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ, করোনাকালীন ২০২০ সালে এই হার বেড়ে হয়েছে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলে সার্বিক দারিদ্র্যের হার ২০১৬ সালে ছিলো ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে ছিলো ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ আর ২০২০ সালে এই হার বেড়ে হয়েছে ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

চরম দারিদ্র্যের হারের (লোয়ার পোভার্টি রেট) ক্ষেত্রে ২০১৬ সালে বিবিএস’র খানা জরিপ অনুসারে এই হার ছিলো জাতীয়ভাবে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে ২০২০ সালে মহামারির প্রভাবে এই হার বেড়ে হয়েছে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে চরম দারিদ্র্যের হার এখন ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ। শহরাঞ্চলে চরম দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে ১৯ শতাংশ।

২০২০ সালে সার্বিক দারিদ্র্যের হার বরিশালে ছিলো ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৩৫ দশমিক ১ শতাংশ, ঢাকায় ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশ, খুলনায় ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৪৬ দশমিক ২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫৫ দশমিক ৫ শতাংশ, রংপুরে ৫৭ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সিলেটে ৩৫ শতাংশ।

প্রাক-কোভিড এবং কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে জাতীয় পর্যায়ে অসমতার তুলনা করার জন্য গিনি সহগ ব্যবহার করা হয়েছে। গিনি সহগ ২০১৮ সালে ছিল শূন্য দশমিক ৩১ এবং ২০২০-এ বেড়ে শূন্য দশমিক ৩২ হয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২০ সালের মধ্যে মাথাপিছু গড় শিক্ষাব্যয় হ্রাস পেয়েছে। তবে গড় মাথাপিছু স্বাস্থ্যব্যয় বেড়েছে, মধ্যম দরিদ্র (৯৭%) এবং অ-দরিদ্র (১০৪%) পরিবারের জন্য এটি সবচেয়ে বেশি।

এই গবেষণায় অনলাইন (টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদি) শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণও পর্যালোচনা করা হয়। গ্রামাঞ্চলের ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং শহরাঞ্চলের ২৭শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষায় অংশ নিতে পেরেছে। উত্তরদাতারা অনলাইন শিক্ষায় অংশ নিতে না পারার কারণ হিসাবে অনলাইন ক্লাসের অপ্রাপ্যতা (৪৯.১%), প্রয়োজনীয় ডিভাইসের অপ্রাপ্যতা (৬.১%), ডিভাইসের অপ্রতুলতা (৫.৩%), ইন্টারনেট সংযোগের অপর্যাপ্ততা (৫.৪%), ইন্টারনেট সংযোগের ব্যয় বহন করতে অক্ষমতার (৬.৫%) কথা উল্লেখ করেছেন ।

মহামারির ফলে কাজ হারানো, পারিশ্রমিক না পাওয়া, কর্মক্ষেত্র বন্ধ হওয়াসহ বিভিন্ন কর্মসংস্থান-সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কেবল ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবারের দাবি ছিল যে তাদের সদস্যরা আগের মতো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পেরেছে। ৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবার দাবি করেছেন যে কাজ থাকা সত্ত্বেও তাদের আয় হ্রাস পেয়েছে, ৮ দশমিক ৬ শতাংশ দাবি করেছে যে তারা কাজ হারিয়েছে।

জরিপে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে, সব ধরনের কর্মসংস্থানে গড় আয় হ্রাস পেয়েছে, যা স্ব-নিযুক্তদের জন্য ৩২ শতাংশ, বেতনভিত্তিক কর্মীদের জন্য ২৩ শতাংশ, দিনমজুরের জন্য ২৯ শতাংশ এবং অন্যদের জন্য ৩৫ শতাংশ।

তবে সঙ্কটের মোকাবেলার জন্য তারা বিভিন্ন ধরণের কৌশল অবলম্বল করেছে। ৪৮ দশমিক ৭২ শতাংশ ঋণ নিয়েছে, ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ সঞ্চয়ের উপর নির্ভরশীল, ২৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ খাদ্য-ব্যয় কমিয়েছে, ২৭ শতাংশ তাদের খাদ্যতালিকায় অনিচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে এবং ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বন্ধু বা আত্মীয়ের কাছ থেকে অনুদান নিয়েছেন।

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin