ফিরে এলো স্মৃতিজাগানিয়া ফেব্রুয়ারি

ছবি: সংগৃহীত

ফিরে এলো রক্তে রাঙানো ফেব্রুয়ারি। ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলো বাংলাদেশের মানুষের কাছে ফিরে আসে প্রেরণার প্রতীক হয়ে। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণের মধ্য দিয়ে জাতি যেন নতুন দিনের পথচলার প্রেরণা খঁুজে নেয়। তাদের জীবনদানের মধ্য দিয়ে যে অর্জন, যে প্রতিজ্ঞা বায়ান্নতে বাঙালি করেছিল স্বাধীন দেশে তার প্রতিফলন ঘটানোর দায়িত্ব নতুন করে মনে করিয়ে দেয় দেশের সরকার, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরের মানুষকে।

দেশভাগের পরে ভাষার দাবিতে বুকের রক্ত ঢেলে লেখা হয়েছিল এক নতুন ইতিহাস। ভাষা আন্দোলনের সেই লড়াই থেকে সঞ্চিত শক্তিই পরবর্তীকালে জুগিয়েছে গণ-অভু্যত্থানের প্রেরণা। বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, জাতির স্বকীয়তা, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ভাষা আন্দোলন সব সময় আলো হয়ে পথ দেখিয়েছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা আন্দোলন জাতির কাছে চির প্রেরণার প্রতীক হয়ে রয়ে যাবে।

১৯৫২ সালের এ মাসেই রক্তঝরা ভাষা আন্দোলন তীব্রতর রূপ ধারণ করেছিল। মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার সংগঠিত দাবি ও আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম গুলি চালানো হয়েছিল। কয়েকটি অমূল্য প্রাণ সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউর, বরকত মৃতু্যবরণ করেছিলেন। গভীর বেদনায়, আবেগে ঐ দিনটি ইতিহাসের পাতায় রক্তের অক্ষরে লেখা হয়ে যায়। বিশেষ সেই তারিখে শহিদদের আত্মদান একটি কিংবদন্িত রূপ লাভ করে। আজ তাই একুশে ফেব্রুয়ারি একটি অভিধা, একটি ধ্বনি, একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছে। পরিণত হয়েছে জাতির জাগরণের প্রতীকে।

ফেব্রুয়ারি তাই ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে সমাজে, রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শপথ নেওয়ার মাস—ফেব্রুয়ারি। আজ ৭০ বছরেও যা করা যায়নি সেই অফিস-আদালত, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে বাংলাকে ছড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকারের মাস ফেব্রুয়ারি।

ভাষার মাসে ভাষাকে নিয়ে নানা আয়োজন শুরু হয়। তবে, শুধু ভাষা নয় বরং জাতি হিসেবে আমাদের করণীয় প্রসঙ্গেও আলোচনা চলে। শিল্প-সাহিত্য-সংগীতসহ শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রে একুশে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা নিয়ে আসে। একুশে উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমির বইমেলা সারা দেশের সাহিত্যানুরাগী মানুষকে এক করে। তবে এ বছর করোনা মহামারির কারণে বইমেলা পিছিয়ে গেছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে অমর একুশে বইমেলা হওয়ার কথা রয়েছে। ভাষা আন্দোলনের প্রেরণাদীপ্ত বইমেলা আজ পরিণত হয়েছে বাঙালির মননের প্রতীকে।

একুশে ফেব্রুয়ারি বলতে ১৯৫২ সালের কেবল সেই দিনটি নয়, এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল সেই ১৯৪৭ সাল থেকে। ১৯৪৭ সালের ১৭ মে হায়দরাবাদে এক উদু‌র্ সম্মেলনে মুসলিম লীগ নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান ঘোষণা দেন, ‘পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে উর্দু’। তার সঙ্গে গলা মেলান আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন। প্রতিবাদে ২৯ জুলাই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ‘আজাদ’ পত্রিকায় বলেন, বাংলাই হওয়া উচিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, তবে দুটি রাষ্ট্রভাষা করা গেলে উদু‌র্র কথা বিবেচনা করা যায়। 

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin