বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি : সংগৃহীত।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথমে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) সদর দপ্তর প্রথম পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। এক বছরেরও বেশি সময় পর ট্রাম্প পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। আর জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথমেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেছেন। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টরা কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন তা বুঝিয়ে থাকেন। ট্রাম্প আমলের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নানা সমালোচনা হয়েছে গত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে। বিশ্বের মিত্র দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তার প্রথম ভাষণে যা বলেছেন তাতে অনেকেই আশাবাদী যে, যুক্তরাষ্ট্র আবার তার পূর্বের নীতিতে ফিরছে। আবার কেউ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ফিরছে, তবে আগের মতো নয়।

বাইডেন প্রথম ভাষণেই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আবার ফিরছে। এর মাধ্যমে তিনি হয়তো বুঝিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে আবার কর্তৃত্ব করতে চায়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে আমেরিকা কর্তৃত্ব হারিয়েছে বলে মনে করেন বাইডেন। এজন্য তিনটি পদক্ষেপ নিতে চান। প্রথমত, রাশিয়ার আগ্রাসি নীতি মেনে না নেওয়া এবং রাশিয়ার জনগণের ওপর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অন্যায় আচরণ বন্ধ করা ও আমেরিকায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপ বন্ধ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।

ট্রাম্প পুতিনের সমালোচনা করতেন না বলে অভিযোগ ছিল। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ট্রাম্পের কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট পাঠাবেন না বলে জানিয়েছেন। অথচ সাবেক প্রেসিডেন্টরা এই গোয়েন্দা রিপোর্ট সম্পর্কে অবহিত হন। বাইডেন প্রশাসনের ভয় এই যে, ট্রাম্প এই গোপনীয় গোয়েন্দা রিপোর্ট অন্য কোনো দেশের কাছে হস্তান্তর করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে আমেরিকা কাজ করবে। তবে যখন আমেরিকার প্রয়োজন পড়বে তখনই। তার আগে চীনকে আমেরিকার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আমেরিকার অর্থনীতি, মেধা সম্পদ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে উত্তর দিতে হবে। যেভাবে আমেরিকার চাকরির বাজারের ও বাণিজ্যের ক্ষতি করেছে চীন তার জবাবদিহি করতে হবে। তৃতীয়ত, মার্কিন মিত্রদের তিনি আশ্বস্ত করতে চান যে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে আছে।

বাইডেন ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের ওপর সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। জো বাইডেন ইরানের সঙ্গে করা আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তিতে ফেরার কথা বলেছেন। তবে এজন্য ইরানকে আগে পরমাণু চুক্তিকে মেনে চলতে হবে। বাইডেন জলবায়ু চুক্তি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় পুনরায় যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্প আমলে জলবায়ু চুক্তি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে আসার ঘটনা ঘটেছিল। বাইডেন প্রশাসন আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার না করার ঘোষণা দিয়েছে।

বাইডেন বলেছেন, আমি যা করতে যাচ্ছি তার কেন্দ্রে রয়েছেন আপনারা। আমাদের বিশ্ব শক্তির কেন্দ্রে পৌঁছতেই হবে। ট্রাম্পের নানা নীতির জন্য আমেরিকার কূটনীতিকরা উত্সাহ হারিয়েছিলেন। তাদের উত্সাহিত করে বাইডেন বলেন, দেশের কূটনীতি আবার আগের মেজাজে ফিরবে। ট্রাম্প মাত্র ১৫ হাজার শরণার্থী নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু বাইডেন ১ লাখ ২৫ হাজার শরণার্থী নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প জমানার এইচ-১বি ভিসানীতি কার্যকর হওয়ার ওপরও আপাতত স্থগিতাদেশ দিলেন বাইডেন। এর পরিবর্তে আগের মতোই লটারির মাধ্যমে ২০২১ সালে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি দক্ষ কর্মীদের আমেরিকায় কাজের সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

সিএনএনে এক বিশ্লেষণে সাংবাদিক স্টিফেন কলিনসন এবং কাইটলিন হু বলেছেন, আমরা এখনো বুঝতে পারলাম না যে, ‘আমেরিকা ফিরছে’-এর অর্থ কী। বাইডেনের প্রথম পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক ভাষণে ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধ, এলজিবিটিদের অধিকার এবং ট্রাম্পের শরণার্থীবিষয়ক নীতির পরিবর্তন ঘটানোর কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি কীভাবে রাশিয়া ও চীনকে মোকাবিলা করবেন, কীভাবে বিশ্ব গণতন্ত্রকে রক্ষা করবেন এবং উত্তর কোরিয়া ও ইরানের পরমাণু অস্ত্রের বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন সেবিষয়ে কিছু বলেননি বাইডেন। তিনি রাশিয়ার অ্যালেক্সেই নাভালনিকে কীভাবে মুক্ত করবেন কিংবা মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানকে কীভাবে পালটাবেন সেবিষয়ে কিছু জানাননি। যদিও মিয়ানমারে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা ছাড়তে বলেছেন তিনি। বাইডেনের ভাষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তিনি বহির্বিশ্বে কেবল আমেরিকার স্বার্থের কথা বলেছেন। বাকি বিশ্বের স্বার্থের কথা বলেননি।

তিনি বলেছেন, আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ হবে বিশ্বের আমেরিকান পরিবারের প্রতিটি সদস্যের স্বার্থের কথা চিন্তা করে। কেউ বলছেন, বাইডেন ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। আবার রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়িয়েছেন। বাইডেন ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কথা বলেছেন। কিন্তু তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলের সুরক্ষার ক্ষেত্রে ছাড় নয় বলে জানিয়েছেন। স্টিফেন কলিনসন এবং কাইটলিন হু বলছেন, আমেরিকা ফিরছে, তবে আগের মতো নয়।

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin