ভর্তুকির সুপারিশ এলপি গ্যাসে

এলপি গ্যাসে ভর্তুকির সুপারিশ। ফাইল ছবি
এলপি গ্যাসে ভর্তুকির সুপারিশ। ফাইল ছবি

বিশ্ববাজারে লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশেও প্রতি মাসে এর দাম নির্ধারণ করা হতে পারে। একই সঙ্গে আমদানি পর্যায়ে ভর্তুকি দিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে কমতে পারে এলপিজির খুচরা মূল্য। সেক্ষেত্রে পাইপলাইনে দেওয়া আবাসিক গ্যাসের দাম বেড়ে যাবে। দেশে এলপি গ্যাসের বাজারে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং পাইপলাইনের গ্যাস ও সিলিন্ডার গ্যাসের মধ্যকার দামের পার্থক্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে এমন পথে হাঁটতে শুরু করেছে সরকার।

দেশের অন্যান্য জ্বালানির মতো এলপিজির মূল্য নির্ধারণের এখতিয়ারও বিদ্যুত্-জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)। এখন পর্যন্ত বিইআরসি নিত্যপ্রয়োজনীয় এ গ্যাসের দাম নির্ধারণ না করলেও সম্প্রতি ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যহার নির্ধারণের ফর্মুলাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে সুপারিশ করেছে। গত মাসে বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত সুপারিশমালা জমা দিয়েছে। এতে বিভিন্ন কৌশল অনুসরণ করে আমদানি খরচ কমানোর নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি আমদানি পর্যায়ে ২৫ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির মূল্যহার নির্ধারণের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নসংক্রান্ত কমিটির সভাপতি ও বিইআরসি সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো অনুসন্ধান ও গবেষণা এবং অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে সুপারিশ করা হয়েছে। বাজার শৃঙ্খলা ও গ্রাহক অধিকার সুরক্ষাকে এই সুপারিশমালা প্রণয়নের সময় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এখন নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের অপেক্ষা। দেশে বর্তমানে এলপিজির বাজার ১ লাখ মেট্রিক টনের। এর মধ্যে দেশজ উত্পাদন মাত্র ২০ হাজার মেট্রিক টন। বাকিটুকু আমদানি করা হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ কমায় গত এক যুগ ধরে দ্রুত বড় হচ্ছে আমদানিনির্ভর এলপিজির বাজার। কিন্তু সে অনুপাতে বাজারশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং গ্রাহকনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। হুট করেই বেড়ে যায় রান্না, পরিবহন ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহূত এ গ্যাসের দাম। এতে নিয়ন্ত্রণ থাকে না সরকারের। এমন প্রেক্ষাপটে ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির মূল্যহার নির্ধারণের বিষয়ে আট সদস্যের একটি কমিটি গত ৮ মার্চ গঠিত হয়। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ এবং অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা শেষে গত মাসে মন্ত্রণালয়ে এই সুপারিশ জমা দেয় বিইআরসি। তবে এ বিষয়ে কোনো গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি।

এ বিষয়ে জ্বালানি খনিজসম্পদ বিভাগের যুগ্মসচিব ড. মহ. শের আলী বলেন, সুপারিশগুলো আমরা পর্যলোচনা করছি। এরপর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আরো কথা বলে এবং প্রয়োজন হলে গণশুনানির মাধ্যমে এলপিজির মূল্যহার নির্ধারণ করা হবে।

দেশে বর্তমানে এলপিজির ৮৪ শতাংশ ব্যবহূত হয় রান্নার কাজে। বাকি ১৬ শতাংশ পরিবহনের অটোগ্যাস, শিল্প ও বাণিজ্য খাতে ব্যবহার করা হয়। এলপিজি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ২৮টি কোম্পানির মধ্যে ২০টি আমদানি করছে। শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারকদের মধ্যে রয়েছে বসুন্ধরা, ওমেরা, বিএম এনার্জি, যমুনা, পেট্রোম্যাক্স, এনার্জি প্যাক, বেক্সিমকো, লাফ্স, সেনা কল্যাণ সংস্থা, নাভানা, ওরিয়ন, প্রিমিয়ার ও জেএমআই।

ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির মূল্যহার নির্ধারণের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নসংক্রান্ত কমিটি বলছে, এলপিজি পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় এর ব্যবহার নিম্ন-আয়ের মানুষের মধ্যে নিশ্চিত করার জন্য ভর্তুকি প্রদানের দাবি দীর্ঘদিনের। পশ্চিম বাংলাসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ১৪ দশমিক ২ কেজি ওজনের ১২টি সিলিন্ডারের প্রতিটিতে ১৫৮ থেকে ১৭৯ ভারতীয় রুপি ভর্তুকি দেওয়া হয়। থাইল্যান্ডে আমদানি পর্যায়ে ভর্তুকি দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এলপিজি অপারেটরদেরকে আমদানি মূল্যের ২৫ শতাংশ ভর্তুকি দিলে এ গ্যাসের মূল্যহার সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হবে। যেহেতু পাইপলাইন গ্যাস ব্যবহারকারীদের জ্বালানি ব্যয় এলপিজি ব্যবহারকারীদের তুলনায় কম হয়, তাই ভর্তুকির অর্থ এ শ্রেণির গ্রাহকদের প্রতি মিটার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জোগান দেওয়া যেতে পারে। এর মাধ্যমে ভর্তুকি প্রদান করা হলেও জনগণ ও সরকারের ওপর চাপ পড়বে না।

এ বিষয়ে বিইআরসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, পাইপলাইনের গ্রাহকদের মধ্যে যারা প্রিপেইড মিটারে বিল দিচ্ছেন তাদের খরচ অপেক্ষাকৃত কম। কিন্তু চুলা হিসেবে যারা বিল দিচ্ছেন তাদের সিংহভাগই যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করছেন, তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বিল দিচ্ছেন। আগে অন্যায্যতা দূর করতে হবে। এছাড়া দেশে আবাসিক গ্যাসের ৪৩ লাখ গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ৩ লাখের মতো গ্রাহক প্রিপেইড মিটার পেয়েছেন। ভবিষ্যতে আবাসিক গ্রাহকসংখ্যা বেশি বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। তাই এ শ্রেণির সব গ্রাহক প্রিপেইডে গেলেও ভর্তুকির টাকা কতটুকু আদায় করা যাবে—তা এখনো পরিষ্কার নয়।

সুপারিশমালায় বলা হয়, বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের মতোই অস্থিতিশীল। সে কারণে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলো সৌদি আরামকো কর্তৃক প্রতি মাসে এলপিজির যে দাম নির্ধারিত হয় তাকে সূচক হিসেবে বিবেচনা করে। বাংলাদেশেও সৌদি আরামকো নির্ধারিত মূল্য ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির মূল্যহার নির্ধারণের জন্য অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে প্রতি মাসে এ গ্যাসের মূল্যের ওঠানামার সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুচরা পর্যায়েও মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin