ভোটগ্রহণ চলছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে।ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে।ছবি: সংগৃহীত

নানান শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে। নিউ ইয়র্কে ভোর ৬টা থেকে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। ভোটগ্রহণ টলবে একটানা রাত ৯টা পর্যন্ত। একেক রাজ্যে ভোট গ্রহণের সময়সীমায় ভিন্নতা রয়েছে। প্রতি চার বছর পর পর নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। একইসঙ্গে সিনেট ও হাউজসহ বিভিন্ন পদে ভোট দেন দেশটির নাগরিকেরা।

এবারের নির্বাচনের আগে ১০ কোটিরও বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রে গত একশ বছরের হিসাবে নতুন রেকর্ড হতে পারে। দেশটির মোট ভোটার ২৩ কোটি।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যে প্রতিদ্বদ্বিতা হচ্ছে। ট্রাম্পই আরো চার বছর হোয়াইট হাউজে কাটাবেন, নাকি জো বাইডেন নতুন বাসিন্দা হবেন তা নির্ধারণ হবে আজই (মঙ্গলবার)।

প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হতে হলে ইলেকটোরাল কলেজ বা নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে জিততে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে মোট ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৩৮, জিততে হলে প্রয়োজন ২৭০টি ভোট। ভোট গণনা শেষ হতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে, তবে ভোটগ্রহণ শেষ হবার পর দ্রুত একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

সিএনএন বলছে, সারাদেশে নিবন্ধিত ভোটারদের ৪৭% এরও বেশি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। এছাড়া ২১টি রাজ্য এবং ওয়াশিংটন ডিসি ইতিমধ্যে তাদের নিবন্ধিত ভোটারদের অর্ধেকেরও বেশি ভোট পড়েছে। চলমান করোর ভাইরাস মহামারী চলাকালীন আগাম ভোটদান, বিশেষ করে টেক্সাস, হাওয়াই, নেভাডা, ওয়াশিংটন, অ্যারিজোনা এবং মন্টানাসহ কমপক্ষে ছয়টি রাজ্য সা¤প্রতিক দিনগুলিতে ২০১৬ সালের সাধারণ নির্বাচন থেকে তাদের মোট ভোটগ্রহণকে ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে উত্তর ক্যারোলিনা, ওরেগন, কলোরাডো, নিউ মেক্সিকো, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা এবং টেনেসিতে আগাম ভোট তাদের ২০১৬ সালের মোট ভোটের কমপক্ষে ৯০ ভাগ।

এছাড়া ৩৭টি রাজ্যে অর্ধেকের বেশি আগাম ভোট পড়েছে, যা এবারের প্রেসিডেন্ট পদে কে বিজয়ী হবেন তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের ফলকে ঘিরে অশান্তি তৈরি হতে পারে এমন আশংকায় নিউইয়র্কসহ ব্যস্ততম রাজ্যগুলোর অনেক দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। তারা পিজবোর্ড দিয়ে দোকানের সামনের অংশ ঢেকে দিচ্ছে সম্ভাব্য সহিংসতা এবং হামলা থেকে বাঁচতে। এরকম বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে স্যাকস, ফিফথ এভিনিউ, নোরডস্ট্রম এবং ফার্মেসি চেইন সিভিএস।

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় সুপারশপ ওয়ালমার্ট গত সপ্তাহে জানিয়েছিল, তারা তাদের স্টোরে সাময়িকভাবে আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি, খোলা জায়গায় প্রদর্শন বন্ধ রাখছে। কারণ তারা ‘গণঅসন্তোষের’ আশংকা করছে। তবে একদিন পর তারা সেই সিদ্ধান্ত বদল করে।

এদিকে সম্ভাব্য গোলযোগের আশঙ্কায় সারা দেশের ভোটকেন্দ্র ও আশেপাশে নিরাপত্তা জোরদার করেছে স্ব স্ব রাজ্য ও নগর পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্র হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সারা দেশের নির্বাচনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং করছে। তারা রাশিয়ার সাইবার আক্রমণের পুনরাবৃত্তি রোধ এবং চীন ও ইরানের হুমকি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে।

এদিকে এবারের নির্বাচন শেষে ফলাফল মেনে নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এ ধরনের নানা ইঙ্গিতও এসেছে। এমনকী নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার বিষয়টি আদালতেও গড়াতে পারে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের একটি ছোট শহর ডিক্সভিল নচে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল পাওয়া গেছে। এখানে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন সবগুলো ভোট পেয়েছেন। আর ট্রাম্প পেয়েছেন শূন্য ভোট।

যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্ত সংলগ্ন এই ছোট শহরটিতে দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী, মধ্যরাতের পরপরই ভোট দেন সেখানকার বাসিন্দারা। ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ডিক্সভিল নচের বালসামস রিসোর্টের দোতলায় ব্যালট রুমে গিয়ে ভোট দেন বাসিন্দারা।

সিএনএন বলছে, ডিক্সভিল নচে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে দিয়েছেন ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। তিনি সেখানকার পাঁচটি ভোটই পেয়েছেন। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি ভোটও পাননি। তবে নিউ হ্যাম্পশায়ারের এই জনপদের নির্বাচনের ফল দেখে বলা যায় না কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। কারণ ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন এই শহরে জয় পেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন।

এদিকে ডিক্সভিল নচের কাছাকাছি মিলসফিল্ডেও মধ্যরাতে ভোট হয়েছে। সেখানে ট্রাম্প ১৬-৫ ভোটে বাইডেনকে হারিয়েছেন।

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin