মূলধারার নামে ধাপ্পাবাজি

জার্নাল ডেস্ক : নিউইয়র্কে মূলধারার নামে ধাপ্পাবাজি চলছে। হঠাৎ ‘আলগা টাকা’র জোরে কথিত মূলধারার একশ্রেণির বাটপার কিসিমের লোক প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাচ্ছেন। তারা জনপ্রতিনিধিদের ‘বোকা’ বানিয়ে অযোগ্য লোকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন প্রক্লেমেশন ও সাইটেশন। কখনো হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ, আবার পরিবারের সদস্যদের জন্য বাগিয়ে নিচ্ছেন চাকরি। সাধারণ প্রবাসীরা তাদের ‘বলির পাঠা’ হচ্ছেন। এসব বাটপারদের ফাঁদে পড়ে যোগ্যতা থাকার পরও মূলধারায় নিজেদের অবস্থান সুসংহত বা সুদৃঢ় করতে পারছেন না বাংলাদেশিরা।

যুক্তরাষ্ট্রে যত বাংলাদেশি রয়েছেন তার দুই তৃতীয়াংশের বসবাস নিউইয়র্ক সিটিতে। আর এই সিটিতে বাংলাদেশিদের গোড়াপত্তন চার দশকেরও বেশী সময় ধরে। শুধু ভোটের মাঠে অগ্রসরমান কমিউনিটি আখ্যা পেলেও বাংলাদেশিরা দিন দিন বরং পিছিয়ে পড়ছে।
আমেরিকার নাগরিক নন, এমনকী আনডকুমেন্টেড বহু বাংলাদেশি মূলধারার রাজনীতিতে নিজেদের শো-অফ করছেন। অনেকে আছেন, যারা কমিউনিটিতে মর্গেজ ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াত এবং হুন্ডি ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত, তারাও কথিত মূলধরার রাজনীতি করছেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে তাদের। মোটা অংকের অর্থ অনুদান দিচ্ছেন বিভিন্ন ফান্ডরেইজিং অনুষ্ঠানে। তাদের ভাবখানা এমন যে তারা নিজেরাই ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল।’

সম্প্রতি কমিউনিটির একজন প্রতারক নিউইয়র্ক সিটির শীর্ষস্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির সরকারি বাসভবনে আমন্ত্রণ নিয়েছেন অর্থের বিনিময়ে। ২৫ হাজার ডলার অনুদান দিয়ে নিয়েছেন প্রক্লেমেশন। অথচ তার দেওয়া পুরো অর্থই হুন্ডি থেকে অর্জিত। এই মোটা অনুদান আদৌ ওই জনপ্রতিনিধির তহবিলে পৌঁছেছে কীনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ যিনি বিষয়টি মধ্যস্থতা করেছেন তিনি এই কমিউনিটিতে বাটপার হিসাবে স্বীকৃত।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মূলধারার রাজনীতির নামে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি শুধু ধাপ্পাবাজি নয়, তারা এটাকে আয়ের প্রধান উৎস হিসাবে বেছে নিয়েছেন। মূলধারার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে ছবি তুলে বাংলাদেশে তা পাঠিয়ে আদম ব্যবসার কাজে লাগাচ্ছেন। বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় নামে বেনামে বিজ্ঞাপন দিয়ে আমেরিকান ভিসা পাইয়ে দেবার গ্যারান্টি দিচ্ছেন। অতি সম্প্রতি এমন একটি চক্রকে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস শনাক্ত করেছে। পুলিশ ঢাকায় অবস্থানরত চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তারও করেছে। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে- এই চক্রের বাকি সদস্যরা নিউইয়র্কের, যারা মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয়।

নিউইয়র্কে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সাইটেশন প্রদান করতে দেখা যায়। কখনো কংগ্রেসনাল, কখনো স্টেট ও সিটির পক্ষ থেকে দেওয়া প্রক্লেমেশন ও সাইটেশন কাকে এবং কী কারণে দেওয়া হচ্ছে তা উল্লেখ করা হয় না। যারা নিচ্ছেন তাদের অনেককেই কমিউনিটির মানুষ চেনেন না। এসব কারণে অনেককে বলতে শোনা যায়, এসব সাইটেশন প্রদানের নেপথ্যে ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’ ঘটনা আছে। অথচ যিনি দিচ্ছেন তাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রাপ্ত ব্যক্তি সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে।
নিউইয়র্কে মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এমন একজন প্রবাসী বাংলাদেশি বলেন, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের সাফল্য আকাশছোঁয়া। অথচ বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতিতে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছেন বাংলাদেশিরা। এর মূল কারণ অসততা। হঠাৎ ‘আলগা টাকার’ গরমে তারা নিজেদের শো-অফ করছেন। তাদের কারণে যারা প্রকৃত রাজনীতি করতে চান, বাংলাদেশিদের মূলধারায় এগিয়ে নিতে চান তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
এসব কারণে নিজেকে গুটিয়ে বাংলাদেশি আমেরিকান বলেন, বাংলাদেশিরা মূলধারার রাজনীতিতে কখনো এগোতে পারবে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, আমরা অনেক সময় ব্রুকলিনের কাউন্সিল মেম্বার শাহানা হানিফের উদারণ দেই। অথচ তিনি বাংলাদেশিদের ভোটে নির্বাচিত হননি। নিজের একাগ্রতার কারণে সাফল্য ছিনিয়ে এনেছেন। আমাদের কমিউনিটিতে শাহানা হানিফের মত সৎ ও জ্ঞানী রাজনীতিক দরকার। অথচ বেশিরভাগ মূলধারার রাজনীতিক ফটোসেশন নির্ভর রাজনীতি করেন। নেতা বা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ছবি তুলেই দায়িত্ব শেষ করেন। এরপর সেগুলো সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বাহবা নেন।

অভিভাবকদের এসব কার্যকলাপে বাংলাদেশি নতুন প্রজন্ম মূলধারার রাজনীতিতে এগিয়ে আসছে না। তারা এ ব্যাপারে হতাশা ব্যক্ত করছে। নতুন প্রজন্ম চোখের সামনে দেখছে অভিভাবকরা মূলধারার রাজনীতির নামে চৌর্যবৃত্তি করছে। অনেকের সন্তান দেখছে- বাবা দেশটির নাগরিক নয়। অথচ স্যুট-টাই পরে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ঘুরছে। তাদের এসব ঘটনা সন্তানদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
এদিকে নির্বাচন মওসুম এলে কিছু বাংলাদেশি মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। মেতে ওঠেন অর্থ-বাণিজ্যে। কেউ মূলধারার নির্বাচনে প্রার্থী হন ফান্ড রেইজিংয়ে। অথচ সারা বছর এসব নেতাদের খবর থাকে না। নির্বাচনে অংশ নিয়ে ফান্ডরেইজ করে বাড়ি-গাড়ি করেছেন এমন কথা বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চালু রয়েছে। নিউইয়র্কে কয়েকজন বাংলাদেশি বাটপার আছেন, যারা প্রতিটি নির্বাচনে প্রার্থী হন। নির্বাচন ছাড়া কমিউনিটিতে তাদের দেখা যায় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মূলধারার একজন রাজনীতিক বলেন, নিউইয়র্কে মূলধারার একজন রাজনীতিক আছেন, যিনি বাংলাদেশি কমিউনিটির কখনো কোনো কল্যাণে আসেননি। কিন্তু প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওপর ভর করে তিনি শ্রমিক রাজনীতিতে নিজের নামডাক ছড়িয়েছেন। এমনকী পুরো পরিবারের সদস্যদের জন্য মোটা বেতনে সরকারি চাকরি জোগাড় করেছেন। স্ত্রীকেও মূলধারার নেত্রী বানিয়ে সরকারি সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছেন। এর বাইরে সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশি কারো উপকার করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ নির্বাচন এলে কিছু অর্থ ছিটিয়ে কমিউনিটিতে নিজের প্রভাব জাহির করেন। এমন রাজনীতিকের সংখ্যাই এখন বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বেশী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে নানান কারণে। যারা মূলধারার ধাপ্পাবাজ হিসাবেও পরিচিত।

  • এই প্রতিবিদনটি নিউইয়র্কের প্রাচীন ও জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ঠিকানা থেকে সংগৃহীত।

মূলধারার নামে ধাপ্পাবাজি

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin