যেভাবে বিশ্বের শীর্ষ ধনী হলেন জেফ বেজোস

জেফ বেজোস | ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে ধনীর নাম কী? এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুদিন আগেও উত্তর হতো মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। কিন্তু এখন আর তা নয়, বিশ্বের শীর্ষ ধনী এখন অনলাইনে কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস। নিউ মেক্সিকোতে ১৯৬৪ সালে জন্ম তার। তার মা ছিলেন এক জন স্কুলশিক্ষিকা। বাবা ছিলেন এক জন কিউবা অভিবাসী, তিনি বেজোসকে দত্তক নিয়েছিলেন। তার জন্মদাতার সঙ্গে তার কোনোদিনই দেখা হয়নি।

বয়স যখন ২২, তখন প্রিন্সটোন থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। সঙ্গে ছিল কম্পিউটার সায়েন্স ডিগ্রিও। মাত্র ৩০ বছর বয়সে অনলাইন টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান আমাজন চালুর পরিকল্পনা করেন তিনি। তার নিজের জমানো কিছু টাকা, আর পরিবারের কিছু সাহায্য—সব মিলিয়ে ১ লাখ ডলারের কিছু বেশি অর্থ, এই ছিল তার বিনিয়োগ। বেজোস তার গ্যারেজে স্বল্প পরিসরে কার্যক্রম শুরু করে। তিনি ১৯৯৫ আমাজন নামে একটা কোম্পানি চালু করলেন, অনলাইনে পুরনো বই বিক্রির। মাত্র এক মাসের মধ্যেই তার ব্যবসা হু হু করে বাড়তে লাগল। ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে শুরু করেন ইন্টারনেটের ব্যবহার সারাবিশ্বে কীভাবে বাড়ছে। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তিনি সমালোচিত। কারণ সাধারণ বইয়ের দোকানের প্রচলন তিনি অনলাইনভিত্তিক করে তুলছিলেন।

১৯৯৭ সালে আমাজন পাবলিক কোম্পানিতে পরিণত হলো, আর অর্থ উঠল ৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বয়স ৩৫ হওয়ার আগেই বেজোস হয়ে গেলেন পৃথিবীর শীর্ষ ধনীদের একজন। অনলাইনে মিউজিক, ইলেকট্রনিকসসামগ্রী বিক্রি করেই বাজিমাত করে এ অনলাইন জায়ান্ট। এরপর শুরু করে পোশাক আর খেলনা বিক্রি। এরপর শুরু করে গৃহস্থালি পণ্য বিক্রি। এসবই অনলাইনে বিক্রি করে আমাজন পুরো বিশ্বে। ১৯৯৯ সালে টাইম ম্যাগাজিন তাকে আখ্যা দিল ‘কিং অব সাইবার-কমার্স’ আর মনোনীত করল পৃথিবীর সবচেয়ে কমবয়স্ক ‘পিপল অব দি ইয়ারের’ একজন হিসেবে।

এরপর তিনি হোলসেল ফুড মার্কেট, অডিও বুক পাবলিশার অডিবল ডট কম, লাইভ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরম টুইচ, পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক বনে যান। ৩৬ বছর বয়সে যাত্রা শুরু করে তার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ব্লু অরিজিন। এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য মহাকাশে পর্যটন ব্যবস্থা সম্প্রসারিত করা। বেজোস বলেন, পৃথিবীতে অনেক কিছুই করা সম্ভব না, যেটা মহাকাশে সম্ভব।

২০১৮ সালে তিনি বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তির স্থান দখল করতে শুরু করেন। তার মোট সম্পদ হয় ১১ হাজার ২০০ কোটি ডলার। আমাজনে বর্তমানে চাকরি করেন ৫ লাখ ৭৫ হাজার লোক—যা ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গের জনসংখ্যার প্রায় সমান।

৫৫ বছর বয়সে স্ত্রী ম্যাকেনজি বেজোসকে তালাক দেন তিনি। ২৫ বছরের বৈবাহিক জীবনের ইতি টানেন। এই দম্পতির সন্তান চার জন। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল তালাকের একটি বেজোসের তালাক। এরপর ম্যাকেনজি বেজোস হয়ে যান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী। ভাগ হয়ে যায় তাদের ১৪ হাজার কোটি ডলারের সম্পত্তি। আমাজনে যারা পণ্য বিক্রি করেন তাদের জন্য পণ্য আনা নেওয়া, ঋণ, বিক্রির প্ল্যাটফরম দেওয়া হচ্ছে, পাশাপাশি এর ‘ক্লাউড কম্পিউটিং বিভাগ’ অসংখ্য বড় বড় কোম্পানির জন্য অনলাইন ডেটা স্টোরেজ সুবিধা দিচ্ছে—যা এখন পৃথিবীর বৃহত্তম।

গত বছর তারা খাদ্যপণ্যের কোম্পানি গোল ফুডস কিনে নিয়েছে, অনলাইন ফার্মেসি কিনেছে। আরো নানা রকম চুক্তির আলোচনা চলছে। এক কথায়, আমাজনের নতুন নতুন উদ্যোগ হাতে নেওয়ার উত্সাহ এতটুকু কমেনি। জেফ বেজোস নিজে এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার মালিক। অন্য অনেক ধনীর মতোই মি. বেজোসের শত্রু ও প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাব নেই। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তার সমালোচকদের একজন। তবে শিগিগরই তিনি আমাজনের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে যাচ্ছেন।

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin