হাতে হাতে ডিজিটাল সেবা

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর পবা উপজেলার হুজুরিপাড়ার কলেজ পড়ুয়া মোসাম্মাদ কুসুম খাতুন। জন্ম থেকেই পায়ে সমস্যা হওয়ায় চলতে ফিরতে তার খুবই কষ্ট। পড়ছেন, নহাটা পলিটেকনিক শাহমকদুম পেয়ারলেস এমবি কলেজে। সরকারের কাছ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতাও পান তিনি। কিন্তু এর আগে এই ভাতা তুলতে তাকে যেতে হতো উপজেলা সদরে। সেটি ছিল কুসুমার জন্য অনেক কষ্টের। 

এখন তাকে এই ভাতা পেতে কোথাও যেতে হয় না। নিজের মোবাইল ফোনেই নগদ একাউন্টে প্রতি মাসের নির্ধারিত সময়ে টাকা চলে আসে। সঙ্গে থাকে ওই টাকা ক্যাশ-আউট করার খরচও। ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে কুসুম সরকারের এই সেবায় দারুণ খুশি। 

শুধু কুসুম একাই নয়, গ্রামের বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও শিক্ষা ভাতা মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনি ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা ঘোষণা করেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, গ্রামের মানুষের কাছে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে। বিকাশের হাত ধরে এই সেবা শুরু হলেও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশের এই সুবিধা গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে ডাক বিভাগের ফিনান্সিয়াল সার্ভিস নগদ। দেশের প্রায় ৮৮ লাখ মানুষের কাছে সরকারি এই সেবাগুলো তারাই পৌঁছে দিচ্ছে। 

নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক ইত্তেফাককে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের জন্যই আমরা এই ভাতা বিতরণের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। আর্থিক খাতে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব। আগে বয়স্ক, প্রতিবন্ধীদের অনেক কষ্ট করে উপজেলা বা জেলা সদরে গিয়ে ব্যাংক থেকে এই টাকা তুলতে হতো। আমরা মানুষের এই কষ্ট লাঘব করতেই যার টাকা তার হাতে পৌঁছে দেওয়ার কঠিন দায়িত্বটি নিয়েছিলাম। এখন আমরা বলতে পারি, সেই কঠিন কাজটি সফলভাবে করতে পেরেছি।’ 

দেশের এখন এমএফএসে একাউন্ট প্রায় ১২ কোটি। এর মধ্যে সক্রিয় একাউন্টের সংখ্যা ৫ কোটির বেশি। বিকাশের মাধ্যমে খোলা একাউন্টের সংখ্যা ৬ কোটির মতো, আর নগদের একাউন্ট সাড়ে ৫ কোটি। রকেটের মাধ্যমেও খোলা একাউন্টের সংখ্যা আড়াই কোটির মতো। তবে একজন গ্রাহক একাধিক একাউন্ট ব্যবহার করেন। দেশের সব মানুষের হাতে এই সেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। 

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ইত্তেফাককে বলেন, ‘এখন আমরা ক্যাশলেস সোসাইটির কথা ভাবছি। নগদ টাকার আর লেনদেন হবে না। ডিজিটাল মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমেই মানুষ দৈনন্দিন আর্থিক কাজগুলো করবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল এখন গ্রামের মানুষও পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী যে রূপকল্প দিয়েছিলেন সেখানে তিনি এই কথাগুলো বলেছিলেন। অনেকেই তখন এই রূপকল্প দেখে বিদ্রুপ করেছিলেন। কিন্তু ২০২১ সালের শেষে এসে আমরা বলতে পারছি, প্রধানমন্ত্রীর দেখানো সেই স্বপ্ন এখন আমাদের কাছে বাস্তব।’  

রাজশাহীর পবার হুজুরিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে বসে কথা বলার সময় ৭৬ বছরের মো. আনিসুর রহমান বলছিলেন, ‘এখন ব্যাংকে লাইন দেওয়ার দরকার নাই। শুক্রবার-শনিবার নাই। টাকা আসলেই হাতে পাচ্ছি। যখন খুশি তুলতে পারি।’ এ সময় আনিসুর রহমানের চোখে মুখে ছিল খুশির ঝিলিক। সমাজের তিন কোটি পিছিয়ে পড়া মানুষকে গত এক বছরে সাড়ে আট কোটিবার সরকারের বিভিন্ন ভাতা ও অনুদান বিতরণ করেছে নগদ। শুধু নগদ নয়, বিকাশের মাধ্যমেও সরকারি ভাতার একটা অংশ বিতরণ করা হচ্ছে। 

আর্থিক অন্তভুর্ক্তির ওপর ভর করেই করোনার সময়ে নগদ এর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা, প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য আর্থিক অনুদান ও সহায়তা বিতরণ প্রক্রিয়াকে ডিজিটালাইজড করতে পেরেছে সরকার। এখন প্রধানমন্ত্রী যে উপহার দেন সেটাও এমএফএসের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মানুষের হাতে। এতে স্বচ্ছতা অনেক বেড়েছে। মানুষের হয়রানি কমেছে। এমনকি এক সময় এই ভাতা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল প্রতিনিয়তই। 

প্রাথমিক পর্যায়ের দেড় কোটি শিক্ষার্থীর মায়ের মোবাইলে চারবার করে উপবৃত্তি বিতরণ করা হয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণের বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘটনা এটা। তাছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৫৮ লাখ দুস্থ ও হতদরিদ্রের ভাতাও দেওয়া হয়েছে। এই দুটি কর্মসূচির মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল সেবার আওতায় নিয়ে আসে সরকার। 

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin