• Homepage
  • >
  • সব খবর
  • >
  • ১৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে আসছেন প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘে ভাষণ ২৪ সেপ্টেম্বর

১৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে আসছেন প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘে ভাষণ ২৪ সেপ্টেম্বর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলার সৌজন্যে


আহরার অর্ণব : জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্ব চলবে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর হতে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। অধিবেশনে যোগদানের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য কর্মসূচি প্রকাশ করেছে। কোভিড এর প্রেক্ষাপটে এ বছর সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে- ‘কোভিড -১৯ থেকে পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশার মাধ্যমে স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করা, টেকসই পুনর্গঠন, গ্রহের চাহিদার প্রতি সাড়া দেওয়া, মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং জাতিসংঘকে পুনরুজ্জীবিত করা।’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সভাগুলো আয়োজন করা হয়েছে।

এবারের অধিবেশনের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকবে কোভিড-১৯ মোকাবিলা এবং পরবর্তী টেকসই পুনরুদ্ধার ও পুনঃনির্মাণ। কোভিড-১৯ হতে মুক্তিলাভের জন্য, বিশ্বব্যাপী ‘ভ্যাকসিন বৈষম্য’ দূরীকরণের বিষয়টি এবারের অধিবেশনে বিশেষভাবে আলোচিত হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এবং কোভিড পরবর্তী টেকসই পুনরুদ্ধারের অন্যতম শর্ত, তাই আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে। বিশ্ব যাতে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা পেতে পারে সে বিষয়েও এবারের সাধারণের পরিষদের অধিবেশনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর যৌথ উদ্যোগে জলবায়ু বিষয়ে ভূমিকা পালনকারী দেশগুলোকে নিয়ে একটি সভা আয়োজন করছে।

কোভিড-১৯ এর কারণে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ অর্জনে যে অগ্রযাত্রা-তা অনেকাংশেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে সম্মিলিতভাবে টেকসই বিনির্মাণের বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ আলোচনা করবেন। এসডিজি’র প্রতিটি লক্ষ্য ও অর্জন ভিত্তি করে কোভিড পরবর্তী পুনরুদ্ধারের বিষয়টি তাই এ অধিবেশনে প্রাধান্য পাবে।

এবারের সাধারণ অধিবেশনে জাতিসংঘ খাদ্য ব্যবস্থা সম্মেলন শীর্ষক একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভার মূল লক্ষ্য হল টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠের অন্তর্ভুক্ত- ক্ষুধা, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য এবং বৈষম্যের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলির সাথে বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থার আন্তঃসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে, উক্ত উন্নয়ন অভীষ্ঠসমূহ অর্জন তরান্বিত করা।

কোভিড এর সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অসহিষ্ণুতা, বৈষম্য-বিভেদ ইত্যাদি আশংকজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধরনের বিভেদ নিয়ে কখনোই টেকসই পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। তাই এ বিষয়টিও এবারের অধিবেশনে আলোচনায় আসবে। ২০০১ সালে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বর্ণবৈষম্য দূরীকরণের ওপর ঘোষণা দেয়। এই বছর সেই ঘোষণা গৃহীত হওয়ার ২০ বছর পূর্তি উদযাপন হতে যাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ একটি উচ্চপর্যায়ের সভা আয়োজন করছে। বর্ণ বৈষম্য ও জাতিগত বিভেদ ভুলে সমতার ভিত্তিতে টেকসই পুনরুদ্ধারের বিষয়টি এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
প্রতিবারের মত এবারো নিরস্ত্রিকরণ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচিত হবে এবং সাধারণ পরিষদের সভাপতি ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখে পারমাণবিক নিরস্ত্রিকরণে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণ এবং এ বিষয়ে বৈশ্বিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ের সভা আয়োজন করছে।

বাংলাদেশের জন্য গুরুত্ব : এবারের জাতিসংঘের চৎরড়ৎরঃু ইস্যুগুলো প্রত্যকটি বাংলাদেশের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই ইস্যুগুলোর উপর যেসব ইভেন্ট আছে বাংলাদেশ তার সব কয়টিতেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। সিভিএফ চেয়ার এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুকির সম্মুখীন দেশ হিসেবে এটি বাংলাদেশের জুন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরবেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি নিরসনে সম্মিলিত বৈশ্বিক উদ্যোগের আহবান জানাবেন। একই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দপ্তর চত্বরে বৃক্ষরোপন করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আয়োজিত এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় বক্তব্য প্রদান করবেন। একই দিনে প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত একটি উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে এই অনুষ্ঠান আয়োজনে ওআইসি, আশিয়ান ও ইউরোপিয় দেশগুলোর পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ছাড়াও গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং ঙওঈ অনুষ্ঠানটির সহ-আয়োজক।

রোহিঙ্গা সমস্যার পঞ্চম বছরে পদার্পণ করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু পাঁচ বছরে একজনকেও মিয়ানমারে পাঠানো সম্ভব হয়নি। অথচ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন আমাদের জন্য এক নম্বর অগ্রাধিকার ইস্যু। এই সাইড ইভেন্টের মাধ্যমে এই বক্তব্যই আমরা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে চাই। আন্তরিকতার সঙ্গে এবং সত্যিকার অর্থে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশ্ব যেনো আমাদের পাশে দাড়ায় বাংলাদেশ সেই আহবান জানাবে।
২৩ সেপ্টেম্ব জাতিসংঘের আয়োজনে উচ্চপর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খাদ্য খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য তুলে ধরার জন্য এই সম্মেলন হবে একটি অনন্য উপলক্ষ্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উক্ত সভায় অংশগ্রহণ করে, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন, টেকসই উৎপাদন, খাদ্য বিতরণ এবং সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অংশীজনদের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ব্যাপারে বিশ্ব নেতৃত্বকে আহবান জানাতে পারেন বলে আশা করা যাচ্ছে। একই দিনে আরো একটি উচ্চপর্যায়ের সাইড-ইভেন্টে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেবেন।
২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন। প্রতিবারের মত এবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বক্তৃতা দেবেন। তিনি বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অর্জন এবং স্বাস্থ্যখাতের সাফল্য সম্পর্কে আলোকপাত করবেন। পাশাপাশি, বিশ্বশান্তি, নিরাপদ অভিবাসন, করোনাভাইরাসের টিকার ন্যায্যতাভিত্তিক বন্টন, বৃহৎ পরিসরে করোনা ভ্যাক্সিন উৎপাদনের লক্ষ্যে পেটেন্টসহ মেধাস্বত্ব উন্মুক্তকরণ, ফিলিস্তিনি ও বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক সংকট, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তাঁর বক্তব্যে উঠে আসবে।

প্রতি বছরের মত এবারও, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীরা প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন। কোভিড মহামারির প্রেক্ষিতে ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী প্রতিবারের ন্যয় বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম, বারবাডোসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়া তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এর সাথেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
প্রতিবারের ন্যায় প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের আয়োজনে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। এই বৈঠকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধার বিষয় সমূহ তুলে ধরবেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরবেন। এর মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি সংযোগ তৈরি হবে।
এবারের সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে বেশ কিছু মন্ত্রিপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে।

একটি শান্তিপূর্ণ ও মানবিক বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টা, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয়ে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন, এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সাফল্য আজ সর্বজনবিদিত। এর ধারাবাহিকতায়, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের দৃপ্ত পদচারণাকে আরও সমুন্নত করবে।

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin