• Homepage
  • >
  • সারাদেশ
  • >
  • কক্সবাজার উপকূলে বাড়ছে সামুদ্রিক শৈবাল চাষ

কক্সবাজার উপকূলে বাড়ছে সামুদ্রিক শৈবাল চাষ

ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার উপকূলে সামুদ্রিক শৈবাল চাষ বাড়ছে। উপাদেয় খাদ্য হিসেবে পরিচিতির পর পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য, ঔষধিপণ্য, প্রসাধনী, সার, বায়ো ফুয়েল ও পরিবেশ দূষণরোধক পণ্য উৎপাদন সম্ভব হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে শৈবাল চাষ। শৈবাল স্থানীয়ভাবে ‘হেজালা’ নামে পরিচিত। এটি সাধারণত পাথর, বালি, পরিত্যক্ত জাল, খোলস বা অন্যান্য শক্ত অবকাঠামোর ওপর জন্মায়।

উপকূলে লাল, বাদামি ও সবুজ—এ তিন ধরনের সামুদ্রিক শৈবাল জন্মে। বাদামি এবং সবুজ শৈবাল খাবার হিসেবে এবং বাদামি ও লাল হাইড্রোকলয়েড উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয়দের মতে, শৈবাল যে উপাদেয় খাদ্য তা কক্সবাজারের অনেকের কাছে ছিল অজানা। স্থানীয় রাখাইন জনগোষ্ঠীর কাছে ‘হেজালা’ একটি উন্নতমানের খাদ্য হিসেবে দীর্ঘদিন থেকেই পরিচিত। চর এলাকা থেকে এটি সংগ্রহ করে রাখাইনরা নিজেদের ঘরে নিয়ে নানা পদের খাদ্য তৈরি করে খেত। শৈবালে প্রচুর আয়োডিন রয়েছে, যা ওষুধ বা লবণের চেয়েও সমৃদ্ধ বিকল্প। আর এতে দুধের চেয়েও ১০ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা শরীরে সহজ পাচ্য।

কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের বাসিন্দা কে মং রাখাইনের মতে, প্রকৃতির দেওয়া প্রায় পদার্থে ঔষধি গুণ রয়েছে। তেমনি ‘হেজালা’ও একটি উপাদেয় প্রাকৃতিক উপাদান। পূর্ব পুরুষদের দেখানো মতে, এটি আমরা খাবার হিসেবে গ্রহণ করে আসছি। কিন্তু এটি আজ সি-উইড হিসেবে শৈবাল নামে পরিচিতি পেয়েছে। ফলে এক সময়ে ফেলনা এ পণ্যটি এখন বাজারমূল্য পাচ্ছে।

কক্সবাজারের নারী উদ্যোক্তা জাহানারা ইসলাম বলেন, নব্বইয়ের দশকে সামুদ্রিক শৈবালের সম্ভাবনা দেখে চাষে হাত দিই। পরে শহরের নুনিয়ারছড়ার কিছু মানুষকে চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। ২০০৮-০৯ সালে সীমিত পরিসরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে শুরু হয় শৈবাল চাষ। এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষের প্রসার ঘটছে। শৈবাল দিয়ে এখন ১২৭ ধরনের আইটেম তৈরি করছি আমি। চাষিদের উৎপাদিত কাঁচা শৈবাল প্রতি কেজি ৬০-৭০ টাকা এবং শুকনো ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় শৈবাল সরবরাহ করে বছরে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন চাষিরা।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, একোয়াকালচার ও মেরিন সায়েন্স অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এ এম সাহাবউদ্দিন জানান, এশিয়ার দেশগুলো শৈবাল চাষ করে আসলেও সামুদ্রিক শৈবালের বিষয়ে আগে আমাদের অভিজ্ঞতা বা গবেষণা ছিল না। বাংলাদেশ মৎস্য বিভাগ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ২০১০ সাল থেকে শৈবাল চাষ নিয়ে কাজ করছে। ২০১৬ সাল থেকে ১০ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবালের ওপর গবেষণা শুরু করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল। বর্তমানে শৈবালের উৎপাদন, কৌশল, প্রক্রিয়াজাতকরণ, ব্যবহারের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। গুরুত্বপূর্ণ সবজির পাশাপাশি কসমেটিকসহ শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে শৈবাল। চাষাবাদ বাড়াতে বর্তমানে কক্সবাজার মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ল্যাবরেটরিতে বীজ উৎপাদন হচ্ছে, যা কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করা হবে।

বাংলাদেশ মেরিন ফিসারিজ অ্যাসোসিয়েশনের ইনানী এলাকার শৈবাল চাষ প্রকল্পের পরিচালক মো. শিমুল ভূঁইয়া বলেন, দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং বিশাল উপকূলীয় এলাকা সি-উইড চাষের জন্য উপযুক্ত। তিনি আরো বলেন, শৈবালের পাঁচটি প্রজাতি থেকে গাড়ি ও বিদ্যুতের জ্বালানি হিসেবে বায়ো ফুয়েল, বায়ো ইথানল, বায়ো হাইড্রোকার্বন, বায়ো হাইড্রোজেন তৈরি করা যায়। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, বাণিজ্যিকভাবে শৈবাল চাষ হলে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি হাজারও নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানসহ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে। তাই সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশি-বিদেশি এনজিও এবং উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে।

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin