কখন জানা যাবে ভোটের ফল

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পরে ডোনাল্ড ট্রাম্প, নাকি জো বাইডেন—কে বিজয়ী হয়েছেন, সেটা জানতে কয়েক দিন, এমনকি কয়েক সপ্তাহও লাগতে পারে। করোনার কারণে এবার প্রায় ১০ কোটি আমেরিকান ডাকযোগে ভোট দিয়েছেন। ফলে সব ভোট গণনা শেষ হতে দেরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফল নিয়ে জটিলতাও হতে পারে। কারণ করোনা মহামারির জেরে নির্বাচন ঘিরে এর মধ্যেই ৪৪টি অঙ্গরাজ্যে ৩০০টির বেশি আইনি মামলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর মধ্যেই বলেছেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত হতে পারে সুপ্রিম কোর্টে।

ফলাফল সাধারণত কখন জানা যায়

সাধারণত নির্বাচনের দিন রাতেই ফলাফল সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায়। এই বছর ৩ নভেম্বর রাতে নির্বাচনের ফলাফল আসতে শুরু করবে। তবে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আলাদা আলাদা সময়ে ভোট গ্রহণ শেষ হয়। প্রথম ভোট শেষ হবে পূর্ব উপকূলের রাজ্যগুলোয়। নির্বাচনের রাতে সব ভোট গণনা কখনোই শেষ হয় না। তবে কে বিজয়ী হতে যাচ্ছে, সেই সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো যখন ধারণা করতে শুরু করে যে, কোনো একজন প্রার্থীর আর পরাজয়ের সম্ভাবনা নেই, তখন থেকেই তারা তার নাম প্রচার করতে শুরু করে। বেশি ভোট পাওয়া মানেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া নয়। তাকে বেশি রাজ্যের ভোট পেতে হবে। জনসংখ্যার বিচারে প্রতিটি রাজ্যের জন্য নির্দিষ্ট ইলেকটোরাল ভোট পান ঐ রাজ্যের বিজয়ী প্রার্থী। জয়ের জন্য দরকার ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট। উইসকনসিনে ভোট মিলে ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে ট্রাম্প বিজয়ী বলে ঘোষণা এসেছিল।

এ বছর কী পার্থক্য?

করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে এ বছর অনেক বেশি মানুষ ডাকযোগে অথবা ব্যক্তিগতভাবে আগাম ভোট দিয়েছেন। ডাকে পাওয়া ভোটে স্বাক্ষর, ঠিকানাসহ নানা যাচাই-বাছাই করতে সময় লাগে। ফ্লোরিডা এবং ওহাইওর মতো কয়েকটি রাজ্য এসব প্রক্রিয়া নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগে শুরু করে। এসব রাজ্যে নির্বাচনের রাতেই বিজয়ীর নাম জানা যায়, যদিও সেটা নির্ভর করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কতটা জোরালো হয়; কিন্তু পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনের মতো অনেক রাজ্যে নির্বাচনের দিনের আগে আগাম ভোটের গণনা করা হয় না। সেখানে ভোট গণনা শেষ হতে কয়েক দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। যদিও গতকাল ছয়টি রাজ্যে ভোট পড়ার হার ২০১৬ সালের মোট ভোটের চেয়ে বেশি। নিউ হ্যাম্পশায়ারের ছোট শহর ডিক্সভিল নচে বাইডেন পাঁচটি ভোটের সবগুলো পেয়েছেন। কানাডা সীমান্তসংলগ্ন শহরটিতে মধ্যরাতের পরপরই ভোট দেন বাসিন্দারা।

আবার যেসব রাজ্যে নির্বাচনের দিন ডাকে পাওয়া ভোট গণনা করা হবে, সেখানে প্রাথমিক তথ্য ট্রাম্পের পক্ষে যেতে পারে, কারণ বেশির ভাগ রিপাবলিকান নির্বাচনের দিন ভোট দেবেন বলে ধারণা। এসব ভোট দ্রুত গণনা করা সম্ভব। যেসব রাজ্য আগে থেকেই আগাম ভোট গণনা সম্পন্ন করে রেখেছে, তাদের প্রাথমিক ফলাফল বাইডেনের পক্ষে যেতে পারে। কারণ বেশির ভাগ রেজিস্টার্ড ডেমোক্র্যাট আগাম ভোট দিয়েছেন। এ কারণেই নির্বাচনি কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, আগাম ফলাফলে পুরো চিত্রটি নাও বেরিয়ে আসতে পারে। টেক্সাসে গাড়িতে বসেই ভোট দিয়েছিলেন এরকম ১ লাখ ২৭ হাজার ভোট বাতিলের জন্য রিপাবলিকানদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত। হিউস্টনের কিছু ‘ড্রাইভ থ্রু’ ভোটকেন্দ্রে এসব ভোট নেওয়া হয়েছিল। পেনসিলভানিয়ায় ডাকযোগে ব্যালট নির্বাচনের পরও গ্রহণ করার অনুমোদন দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের কঠোর সমালোচনা করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সোমবার সন্ধ্যায় টুইটারে হুমকি দিয়েছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

সময় লাগার আরো কারণ

ভোট ৩ নভেম্বর হলেও এর পরের কয়েক দিন পর্যন্ত অধিকাংশ অঙ্গরাজ্য পোস্টাল ব্যালট গ্রহণ করবে। তবে সেসব ব্যালটে অবশ্যই ৩ নভেম্বরের সিল থাকতে হবে। সুতরাং নির্বাচনের বেশ কয়েক দিন পর পর্যন্ত ভোট আসতে পারে এবং গণনা চলতে থাকবে। আবার প্রভিশনাল ব্যালট বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। অর্থাত্ অনেকে হয়তো পোস্টাল ব্যালট চেয়েছিলেন; কিন্তু পরবর্তী সময়ে ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়ে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন; কিন্তু এসব ভোট তাত্ক্ষণিকভাবে গণনায় আসবে না। কারণ এসব ভোট যাচাই-বাছাই করতে হবে। কেউ দুই বার ভোট দেননি—এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ ভোটিং মেশিনের কারণেও দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হতে পারে।

ভোট কীভাবে গণনা করা হয়

বেশির ভাগ ভোট কাগজেই হোক বা ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে গণনা করা হয়। তবে কোনো কাগজের ব্যালট পরীক্ষা করতে যন্ত্র ব্যর্থ হলে নির্বাচনি কর্মীদের সেগুলো পরীক্ষা করে দেখতে হয়। ভোট গ্রহণ শেষে সকল তথ্য কেন্দ্রীয় নির্বাচনি দপ্তরে চলে যায়। অনেক স্থানে এটা ইলেকট্রনিক্যালি হয়ে থাকে। তবে বেশির ভাগ স্থানে মেমোরি ডিভাইসে ভোটের তথ্য স্থানান্তর করা হয় অথবা টেলিফোনে পড়ে শোনানো হয়। ভোটের তথ্য যাচাই করার পরেই অনেক সময় সেগুলো রাজ্যের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। এসব তথ্য সাংবাদিকদের জানান নির্বাচন কর্মকর্তারা। যখন একটি রাজ্য জুড়ে কোনো প্রার্থী নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান, তখন ঐ প্রার্থী রাজ্যের বিজয়ী। তবে প্রাথমিক গণনার সঙ্গে চূড়ান্ত ফলাফলে পার্থক্য দেখা দিতে পারে, তবে সেটা সাধারণত খুব বেশি হয় না।

আজ যা ঘটতে পারে

জয়ী প্রার্থীর নাম জানতে কয়েকটি রাজ্যের ওপর নজর দিতে হয়। যেমন নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা, অ্যারিজোনা, ওহা্ও, পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন এবং মিশিগান। এদিকে বিবিসির উত্তর আমেরিকার সংবাদদাতা জন সোপেল আজ তিনটি দৃশ্যপটের সম্ভাবনার কথা বলেছেন। জো বাইডেনের সহজ জয়, ট্রাম্পের হতবাক করা জয় এবং বাইডেনের বিপুল জয়। এছাড়া আরেকটি অভাবিত ঘটনা ঘটতে পারে। তাহলো নেব্রাস্কার ভোট ভাগাভাগি হয়ে ট্রাম্প এবং বাইডেন দুই জনেই ২৬৯টি করে ইলেকটোরাল ভোট পেতে পারেন। আবার জয় হলেও পরাজিত প্রার্থী ফল নাও মানতে পারেন। এতে আইনি লড়াইও শুরু হতে পারে। স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তাদের ভোট গণনা ও ফল নিয়ে দলীয় আইনজীবীরা রাজ্যের আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। আদালতের বিচারকরা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে আবার গণনার নির্দেশ দিতে পারেন। এরপর সেটি আবার সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হতে পারে।

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin