• Homepage
  • >
  • নিউইয়র্ক
  • >
  • নিউইয়র্কে সাংবাদিক-লেখক শিতাংশু গুহ’র ‘করোনার কথা’ ও ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান

নিউইয়র্কে সাংবাদিক-লেখক শিতাংশু গুহ’র ‘করোনার কথা’ ও ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান

বক্তব্য দেন লেখক-সাংবাদিক শিতাংশু গুহ। ছবি সংগৃহীত।

জার্নাল রিপোর্ট : নিউইয়র্কে সাংবাদিক-লেখক শিতাংশু গুহ’র লেখা ‘করোনার কথা’ ও ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়ে গেল স্থানীয় সময় রবিবার (৫ জুন)। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরন নবী।
লেখক ও বুদ্ধিজীবী বেলাল বেগের সভাপতিত্বে এবং ফকির ইলিয়াসের সঞ্চালনায় প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ঢাকার একুশের বই মেলা ২০২১ ও ২০২২-এ ‘করোনার কথা’ ও ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ প্রকাশিত হয়। আগামী প্রকাশনী বই দু’টি প্রকাশ করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধ ও সীতাকুণ্ডে নিহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বই দু’টির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
লেখক শিতাংশু গুহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বই দু’টি প্রকাশের পটভূমি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘করোনার কথা’ মূলতঃ করোনাকালীন নিউইয়র্কে যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো, এতে তা বিধৃত আছে। আরো আছে ওই সময় বহু মৃত্যু ও বেঁচে থাকার কাহিনী। বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের ঘটনা এবং অতীত মহামারীর ইতিহাস আছে। এতে বেশ ক’জন ডাক্তারের কথাবার্তা এবং তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণিত হয়েছে। লেখকের মতে বইটি ট্রাজেডিময় এবং একটি প্রামাণ্য দলিল।
‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ নাম প্রসঙ্গে লেখক জানান, সম্ভবতঃ ৮০’র দশকের শুরুতে ঢাকার ফার্মগেট সংলগ্ন গ্রিনরোডে একদিন একটি ট্রাক যাচ্ছিলো। ট্রাকের বিশাল পেট্রল ট্যাঙ্কির ওপর লেখা ছিলো ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’। এতদিন বাদেও লেখক তা ভুলেননি। তার মতে তিনি জন্ম থেকেই জ্বলছেন।
বইয়ের শুরু বঙ্গবন্ধু‘র ওপর প্রবন্ধ দিয়ে। লেখক প্রশ্ন রেখেছেন, আজকের বাংলাদেশ কী বঙ্গবন্ধু’র বাংলাদেশ? এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম?
প্রধান অতিথি ড. নুরন নবী প্রচন্ড সর্দি, কাঁশি ও জ্বরের কারণে উপস্থিত হতে পারেননি, তবে টেলিফোনে তাঁর বক্তব্য পেশ করেন। তিনি লেখকের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ বইটি’র ওপর মূল আলোচনা করেন নিউইয়র্কের ওয়েস্টবারি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সব্যসাচী ঘোষ দস্তিদার। ‘করোনার কথা’ বইয়ের মূল আলোচক ছিলেন লেখক ডা. সুভাষ শিকদার। সাবেক উপাচার্য ড. দুর্গাদাস ভট্টাচার্য্য একটি লিখিত বক্তব্য পাঠিয়ে দেন, যেটি পড়ে শোনান ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়া।
লিখিত বক্তব্যে ড. দুর্গাদাস ভট্টাচার্য্য ‘করোনার কথা’ বইয়ের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, লেখক যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন, তা কেউ করতে চান না বা শুনতে চান না, অথবা মানতে চান না। অথচ ঘটনা ঘটছে। বুঝতে হবে লেখক কেন জন্ম থেকে জ্বলছেন।
ডা. সুভাষ শিকদার বলেন, করোনা নিয়ে ঘটনাবলী লেখক সুন্দরভাবে ফুটিয়েছেন, যা হয়তো ভবিষ্যতে গবেষণায় সাহায্য করবে। তিনি বলেন, ডাক্তারদের যে কাজটি করার কথা, তা করেছেন শিতাংশু গুহ।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব দেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়, সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকার সভাপতি মিথুন আহমমেদ, ডা. মাসুদুল হাসান, মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারী, ডা. মিতা গোপ, ব্রঙ্কস কমিউনিটি বোর্ডের সহ-সভাপতি শাজাহান শেখ, সুশীল সাহা প্রমুখ।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরেশ সাহা, ডা. প্রভাত দাস, সবিতা দাস, কবি নিখিল রায়, ভজন সরকার. ড. শেফালী দস্তিদার, সংগঠক উত্তম সাহা, রামদাস ঘরামী, গোপাল সান্যাল, অসীম সাহা, রীনা সাহা, কুমার বাবুল সাহা, বিষ্ণু গোপ, সুশীল সিনহা, বিভাস মল্লিক প্রমুখ।
করোনার কথা প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. দুর্গাদাস ভট্টাচার্য
৫ই জুন ২০২২ তারিখ শিতাংশু গুহ-র দু’টো গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে আমার উপস্থিত হওয়ার ইচেছ ছিল, কিšদ স্বাস্থ্যগত কারণে তা হয়ে উঠল না। দু’টো পুস্তকের মধ্যে একটি পুস্তক ” করোনার কথা”। এ পুস্তকে তাঁর লেখাগুলো করোনা কেন্দ্রানুগ। এ মহাদুর্যোগময় সময়ে কী ঘটেছে এবং প্রবাসে অবস্থানরত বাঙ্গালী কিভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করেছেন তার তথ্য নির্ভর বর্ণনা রয়েছে এ গ্রন্থে । এ বইটিতে বহু ঘটনার বর্ণনায় লেখক অত্যন্ত সহজ ভাষায় মানুষের অন্তরাত্মার অভিনড়ব মানসপট তুলে ধরেছেন। প্রবাসে অবস্থানরত বাঙ্গালী সবকিছু ভুলে যেয়ে একে অপরের পাশে থেকেছেন, মৃতের শেষ কৃত্য সম্পনড়ব করেছেন এবং কোভিডের থাবা থেকে বেচেঁ যাওয়া মানুষের পুনরায় দাঁড়াতে শক্তি যুগিয়েছেন। লেখক এ ঘটনাগুলোর ভাবাবেগ বিবর্জিত উপস্থাপনার মাধ্যমে বাঙ্গালী মানসকে সঠিকভাবে চিত্রায়িত করতে সক্ষম হয়েছেন।
মমত্ববোধ, অন্তর নিঃসৃত আবেগ এবং অনুভূতির ছোয়া দুঃখ ও বেদনার মধ্যে নিজের জনকে পেয়ে আর্ত ও অসহায় মানুষ স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলেছেন। জীবনের ঝুকি নিয়েও বহু মানুষ করোনায় আμান্ত রোগীদের সেবায় এগিয়ে এসেছেন। এবিষয়গুলো লেখকের বাছাইকৃত ঘটনার মধ্যে পরিস্ফুট হয়েছে। সমাজে আবুল বাশারের মত মানুষ আছেন যারা ভিনড়ব ধর্মের অনুসারী মৃত ব্যক্তির সৎকারের জন্য সামাজিক দায়িত্ব পালন করেন। সমাজে সাধন দাসের মত নিরবে নিভৃতে নর নারায়নের সেবায় নিয়োজিত নিষ্কাম কর্মী লেখকের দৃষ্টি এড়ায়নি। এ বইটি ছোট আকারের হলেও কোভিড-১৯ জনিত মহাদুর্যোগকালে নিউ ইয়র্ক শহরে মানুষের দুঃখ ও বেদনার করুণ চিত্র বিধৃত হয়েছে। শ্রীমতি সুজাতা চৌধুরীর ঘটনা লেখক অত্যন্ত বিস্তৃতভাবে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। প্রিয় স্বামীর মৃতদেহ এক কক্ষে, অন্য কক্ষে ”একই রোগে আμান্ত তিনজন মানুষ বসে আছেন” এক অজানা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য। এ মর্মস্পর্শী ঘটনা প্রতিটি পাঠকের দেহস্থ প্রাণকোষে আঘাত করে। এ জাতীয় হৃদয়বিদারক ঘটনা একটি নয়, বহু।
প্রবাসে বাঙ্গালী সমাজ মানবতার সেবায় বহু ঝুঁকি নিয়ে নিজের ও পরিবারের কথা না ভেবে অসহায় ও বিপনড়ব মানুষের পাশে থেকেছেন । তাঁরা কোভিডকে জয় করার জন্য নিরলস সংগ্রাম করেছেন। এগুলোর নিখুত বর্ণনা রয়েছে এ বইটিতে। নিজের ধুমপানের নেশা পূরণের জন্য যে নিষ্কাম কর্মী বাহিনীকে ব্যবহারের চেষ্টা হয়েছে তাও লেখক উল্লেখ করেছেন। একইভাবে জীবনকে তুচ্ছ করে বহু সমাজ কর্মী রাতদিন সেবা দিয়েছে। সেসঙ্গে এমন ঘটনাও ছিল যে, হাসপাতালে ৮২ বছরের বৃদ্ধ করোনা থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন এবং হাসপাতাল থেকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিšদ পরিবারের লোকজন তাকে নিতে চায়নি। অবশ্য ডাক্তার তাদের বুঝানোর পর তারা সম্মত হয়। বিচিত ঘটনার মধ্যে এটি স্পষ্ট যে, উত্তম ও অধমের সংমিশ্রনেই এ সমাজ। অসহায় মানুষের সেবায় নিষ্কাম কর্মীর অভাব হয় না, একইভাবে অমানবিক আচরণ সম্পনড়ব মানুষও থাকে। উল্লিখিত বইটিতে নির্মোহভাবে লেখক বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন।
এক-দু’টি ঘটনা বাদে এ বইটির মোট ৬১টি অনুচ্ছেদ পড়লে মনে হয় যে, মানুষ মানুষের জন্যে। মহাদুর্যোগের সময় ধর্ম, বর্ণ ও সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে মানুষ কিভাবে পারস্পরিক সাহায্যে আর্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার বিবরণ লেখক সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। মহাদুর্যোগের কালোদিনগুলোতেও মানুষের অন্তরাত্মার তাগিদ যে এক এবং অভিনড়ব তা তাঁর বর্ণনায় ফুটে উঠেছে।
নির্ভুল ছাপা, মেক-আপ, ফন্ট নির্বাচন ও সার্বিক উপস্থাপনা বইটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী জনাব ওসমান গনির রূচিবোধ ও সৃজনশীল কর্মে তাঁর অঙ্গীকার এ প্রকাশনাকে সম্ভব করেছে। সামাজিক বিবর্তনের μমধারায় ”করোনার কথা” বইটি একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শিতাংশু গুহ-র লেখা এ গ্রন্থের বহুল প্রচার কাম্য।

‘করোনার কথা’ ও ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ বই হাতে অতিথিরা। ছবি সংগৃহীত।
  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin