• Homepage
  • >
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • >
  • যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন: ক্ষমতার ভারসাম্য নাকি একচ্ছত্র আধিপত্য?

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন: ক্ষমতার ভারসাম্য নাকি একচ্ছত্র আধিপত্য?

যুক্তরাষ্ট্র ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত।

জার্নাল রিপোর্ট : মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগাম ফলাফলে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে রিপাবলিকানদের জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন অনেকেই। তবে সেসব ভবিষ্যদ্বাণীকে ভুল প্রমাণ করেছে বাইডেনের দল ডেমোক্রেটিক পার্টি। গত ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের ভোট হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পরেও কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টানটান প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। মঙ্গলবার রাত পৌণে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কয়েকটি আসনে এখনও ভোট গণনা অব্যাহত ছিল। এনবিসি নিউজ এক প্রজেকশনে দেখিয়েছে যে রিপাবলিকানরা ২২০টি আসনে জয়ী হতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা পাচ্ছেন ২১৫টি।
এর আগে মঙ্গলবার স্পিকার পদে রিপাবলিকান মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন অ্যারিজোনা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস মেম্বার কেভিন ম্যাককার্থি। তিনি বর্তমান হাউজের মাইনরিটি লিডার। রিপাবলিকানরাই যে হাউজের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন এবং দুই বছর পর রাষ্ট্রক্ষমতায় ভারসাম্য আসছে, তা অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যাচ্ছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে চূড়ান্ত ফলাফলের ওপর।
মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি এবং বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সর্বশেষ মধ্যবর্তী নির্বাচনে সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ দখল করার প্রত্যাশা করেছিলেন রিপাবলিকানরা। সর্বত্র লাল ঢেউয়ের প্রত্যাশা করেছিলেন অনেকেই। গত ৮ নভেম্বরে মঙ্গলবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর থেকে হাউজ এবং সিনেট নিয়ে চলছিল তুমুল উত্তেজনা এবং শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। গত ১২ নভেম্বর শনিবার নেভাদার ফলাফল ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেই পরিস্থিতির অবসান ঘটে। ফলে সিনেট নিয়ে আর কোনো ভাবনা নেই আপাতত ডেমোক্র্যাটদের।
সিনেটে জর্জিয়ার আসনের ফলাফল অমীমাংসিত রয়েছে। মূলত গত সপ্তাহের নির্বাচনে কোনো প্রার্থীই সরাসরি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় আগামী ৬ ডিসেম্বর সেখানে রান-অফ নির্বাচন অর্থাৎ দ্বিতীয় দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনের ফলাফলে ডেমোক্র্যাটদের এখন আর কিছুই এসে যায় না। কারণ, নেভাদার আসন মিলে ডেমোক্র্যাটদের এখন আসন সংখ্যা ৫০। তার সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের আছে কংগ্রেসে ভোট দেয়ার ক্ষমতা। তাকে নিয়ে তারা পৌঁছে গেছে ম্যাজিক ফিগার ৫১-তে। অন্যদিকে রিপাবলিকানদের এখন পর্যন্ত আসন সংখ্যা ৪৯। তারা যদি জর্জিয়াতেও জেতে, তাহলে তাদের আসন সংখ্যা দাঁড়াবে ৫০। ফলে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে ডেমোক্র্যাটদের হাতেই।
নেভাদায় গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী ক্যাথরিন কর্টেজ মাস্তো সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অ্যাডাম ল্যাক্সাল্টকে প্রায় ৫২% বেশি ভোটে পরাজিত করেন। দলকে এমন বিজয় নিশ্চিত করার জন্য নেভাদার নবাগত রাজনীতিক ক্যাথেরিনের প্রশংসায় ভাসছে ডেমোক্র্যাট দল ও এর নেতারা। তাকে প্রাণখোলা অভিনন্দন জানিয়েছেন সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা ও নিউইয়র্কের সিনেটর চাক শুমার।
ক্যাথেরিনকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেছেন, ধন্যবাদ আমাদের সিনেটররা। আপনারা গ্রেট এক প্রচারণা চালিয়েছেন। চমৎকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ধন্যবাদ পিটার ওয়েলচ এবং জন ফেটারম্যানকে। আপনারা আমাদের নতুন সিনেটর। ধন্যবাদ আপনাদের।
তিনি আরো বলেন, আমরা জর্জিয়াতেও বিজয়ী হবোÑ এ আত্মবিশ্বাস আছে আমার। সেখানে সম্মানিত ওয়ারনাক আবার বিজয়ী হয়ে সিনেটে আসবেনÑ এ বিশ্বাস আছে আমার। এরই মধ্যে তিনি অনেক ভালো কাজ করেছেন।
ক্যাথেরিনের বিজয়ের খবরে তিনি বলেছেন, দেশের জন্য আমি খুবই স্বস্তি বোধ করছি। কারণ, আমার মতো অনেকেই ভীষণ উদ্বেগে ছিলেন এই গণতান্ত্রিক বিজয়ের জন্য। সব নেতিবাচক ও হুমকিকে সঙ্গে নিয়ে এবং কিছু মানুষের সহিংসতার পরও আমরা এই বিজয় অর্জন করেছি। শুধু দলীয় নেতারাই নন, রিপাবলিকান দলের কিছু মানুষ এই সহিংসতার কড়া নিন্দা জানান। তাই আমেরিকা দেখিয়ে দিয়েছে আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। এই গণতন্ত্রের শিকড় অনেক শক্তিশালী। আমরা যতদিন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করবো, ততোদিন আমাদের বিজয় হবে।
চাক শুমার দেশের ভিতর যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে, তাকে সারিয়ে তুলতে রিপাবলিকানদের প্রতি আহ্বান জানান। বলেন, যেসব মানুষ নোংরা কাজ করে, বিষাক্ত বক্তব্য দেয়, তাদেরকে নিয়ে আমেরিকার মানুষ সন্তুষ্ট নয়। আমার রিপাবলিকান সহকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাই, অনেক ইস্যুতে আমাদের মতের অমিল থাকতে পারে, সেটা ঠিক। কিন্তু আসুন আমরা এ ধরণের নেতিবাচক বিভক্তিকে এড়িয়ে চলি। আসুন আমরা সহিংসতা, বিষাক্ত বাক্যবর্ষণ বন্ধ করি। আসুন শেষ পর্যন্ত সবাই একত্রিত হই।
অন্যদিকে হাউজ এখনও কার দখলে যাচ্ছেÑ তা নিশ্চিত না হওয়া গেলেও এগিয়ে রয়েছে রিপাবলিকানরা। সর্বশেষ ফলাফলে দেখা গেছে রিপাবলিকানরা পেয়েছেন ২১৫ আসন এবং ডেমোক্র্যাটরা ২০৪ আসনে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২১৮টি আসন এখনও রিপাবলিকানরা নিশ্চিত করতে পারেনি। তাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে ডেমোক্র্যাটরা। এমন কী তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের আশা এখনও ছেড়ে দেয়নি।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে দল প্রত্যাশার চেয়ে ভাল ফল করায় ডেমোক্র্য্যাটিক পার্টিতে বাইডেনের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে। হোয়াইট হাউজ থেকে তার ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীর হওয়ার সম্ভাবনার জোর ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। ইতিহাস বলছে, মধ্যবর্তী নির্বাচনগুলোতে ঐতিহ্যগতভাবে ক্ষমতায় থাকা দলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে থাকেন আমেরিকানরা। তবে এবার তাও হলো না। ফলে ডেমোক্র্যাটরা চাঙ্গা মনোভাব নিয়েই কাজ করছেন। আর পরিস্থিতি অনুকূলে থাকার পরও দলের খারাপ ফলের জন্য রিপাবলিকানরা এখন একে অন্যকে দুষছেন।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন সমাবেশে ঘোষণা করে আসছেন। তবে সর্বত্র লাল ঢেউ না ওঠায় রিপাবলিকান শিবির হতাশায় ডুবেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পও প্রত্যাশিত ফলাফল না পেয়ে অনেকটা হতাশ হয়েছেন। চটেছেন দলের নেতাকর্মীদের ওপর। যদিও আগামী নির্বাচনে ট্রাম্প ছাড়াও রিপাবলিকান দলের আরো বেশ ক’জন প্রার্থী হতে পারেন, তারও আভাস ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ ফলাফলে বেশ উচ্ছ্বসিত। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০ বছরের মধ্যে মধ্যবর্তী নির্বাচনে সবচেয়ে ভালো ফল করেছেন বলে দাবি করছেন জো বাইডেন। তার দল ডেমোক্র্যাটরা প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতের পর গত ১২ নভেম্বর কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন থেকে প্রসিডেন্ট জো বাইডেন উল্লাস প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনের ফল নিয়ে তিনি খুবই সন্তুষ্ট।
সংবাদমাধ্যম বলছে, সিনেটের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে গেলেও নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ নিয়ে চিন্তায় রয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। কারণ রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদে এখন পর্যন্ত ২১১টি আসনে জয় পেয়েছে।
অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা জয় পেয়েছে ২০৪টি আসনে। প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২১৮টি আসন। ফলে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ রিপাবলিকানদের হাতেই যাচ্ছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে।
মিশিগানে ডেমোক্র্যাটদের উত্থান : আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনে মিশিগান স্টেট গভর্নর হিসেবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির গ্রেচেন হুইটমার আবারও নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী টুডোর ডিক্সন।
ভোটের প্রায় ৯৯ শতাংশ গণনায় গ্রেচেন হুইটমার পেয়েছেন ২৪ লাখ ২৫ হাজার ৪৪০ ভোট। যা মোট ভোটের ৫৪.৫ শতাংশ। অন্যদিকে রিপাবলিকান টুডোর ডিক্সন পেয়েছেন ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৭৮০ ভোট, যা মোট ভোটের ৪৩.৯ শতাংশ।
গত ৮ নভেম্বর মিশিগান গভর্নর, লোটন গভর্নর, সেক্রেটারি অফ স্টেট, অ্যাটর্নি জেনারেল, মিশিগান কংগ্রেস, মিশিগান সেনেটর, মিশিগান স্টেট হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ, মিশিগান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং ডিস্ট্রিক্ট জজ পদসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ বোর্ডের নানা পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। মিশিগান স্টেটে রেজিস্ট্রার ভোটারের সংখ্যা ৮২ লাখ ১৩ হাজার ২৮১ জন।
অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ডেমোক্র্যাটিক দলের ডানা নেসেল ২৩ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৮ ভোট পেয়ে ফের নির্বাচিত হয়েছেন। মোট ভোটের ৫৩.২ শতাংশ পেয়েছেন তিনি। প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী মাথিউ ডিপ্রেনো পেয়েছেন ১৯ লাখ ৫০ হাজার ১৯ ভোট। যা মোট ভোটের ৪৪.৫ শতাংশ।
এদিকে মিশিগান স্টেট সিনেটে রিপাবলিকানদের শিবিরে আঘাত হেনেছে ডেমোক্র্যাটরা। ২০২০ সালের নির্বাচনে ৩৮টি আসনের মধ্যে ২২টিতে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলো রিপাবলিকানরা। এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ৩৮টি সেনেটের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৯টিতে এগিয়ে রয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। তবে ডিস্ট্রিক্ট-৯ ও ডিস্ট্রিক্ট-১২ আসনের ফলাফল এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ওই দুটি আসনে ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান প্রার্থীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান কম থাকায় আবারও গণনা হবে।
অন্যদিকে মিশিগান হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ ১১০ ডিস্ট্রিক্টের মধ্যে ৫৬টিতেই ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। গত ২০২০ সালের নির্বাচনে ৫৬টি ডিস্ট্রিক্টে বিজয়ী হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলো রিপাবলিকানরা। এই মধ্যবর্তী নির্বাচনে হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভে রিপাবলিকানদের দুর্গ ভেঙে দিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। মোট ১১০টি ডিস্ট্রিক্টের মধ্যে ৫৬টি ডিস্ট্রিক্টে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। এছাড়া মিশিগান কংগ্রেসে ১৩টির মধ্যে ৭টি আসনেই জিতেছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীরা।

এদিকে এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে গর্ভপাত সুরক্ষায় ব্যাপক গণসংযোগ করেছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। তারা বলছে, যার শরীর তার অধিকার। অপরদিকে গর্ভপাত নিয়ন্ত্রণে প্রচারণা চালিয়েছে রিপাবলিকান দল। তারা বলছে, এটি জীব হত্যা, তাই গর্ভপাত নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। গণভোটে গর্ভপাত সুরক্ষায় হ্যাঁ ভোট পড়েছে ২৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৬২। মোট ভোটের ৫৬.৯ শতাংশ। গর্ভপাত নিয়ন্ত্রণে না ভোট পড়েছে ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৩৭৫। যা মোট ভোটের ৪৩.৩ শতাংশ।

  • facebook
  • googleplus
  • twitter
  • linkedin
  • linkedin
  • linkedin